জাতীয় শোক দিবসের কবিতা

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কবিতা | বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি

আজ জাতীয় শোক দিবস আগস্ট ১৫ তারিখ। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এই দিবসের উৎপত্তি ঘটে। প্রত্যেক বছর জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ এই দিনটিতে কালো পতাকা উত্তোলন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে এ দিনকে সম্মান জানায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর নিজ বাড়িতে সেনা সদস্যরা সপরিবারে তাকে হত্যা করে। সেই হত্যাকাণ্ডে তার পরিবারের সদস্যসহ আত্মীয়-স্বজন সর্ব মোট ১৬ জন নিহত হন। বাংলার মানুষ আজও সেই দিনটিকে ভুলতে পারিনি যে মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা যুগিয়ে ছিল তাকে এভাবে মরতে হবে কেউ ভাবতে পারেনি। তাই অনেকেই বলে যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই।

এই দিনটিকে আরো স্মরণীয় করে রাখতে অনেক বিখ্যাত কবিগণ জাতীয় শোক দিবস নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা রচনা সহ 15 ই আগস্ট নিয়ে কবিতা লেখা হয়েছে। অন্যদিকে অনেকে আছেন যারা শেখ রাসেল কবিতা জানার জন্য অনুসন্ধান করেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টের শোক দিবসের জনপ্রিয় রচনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবসের কবিতা

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ ঘটিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জাতীয় শোক দিবসের কবিতা রচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা জাতীয় শোক দিবসের কবিতা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার করতে চান। আপনাদের জন্য আজকের এই শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় শোক দিবসের কবিতা উল্লেখ করা হয়েছে।

যে কবিতা গুলো ব্যবহার করে ১৫ই আগস্ট শোক দিবসের ঘটনা বর্ণনা করতে পারবেন। বিভিন্ন কবিগণ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তাদের কবিতার মাধ্যমে তাদের মনের ভাবনাগুলো উপস্থাপন করেছেন।

শোক দিবসের কবিতা

১৫ ই আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে ভয়াবহ কালো দিন হচ্ছে ১৫ ই আগস্ট। এই শোকের দিনকে নিয়ে বিভিন্ন কবিগণ শোক দিবসের কবিতা লিখেছেন। আপনাদের জন্য এখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শোক দিবসের জনপ্রিয় কবিতাগুলো নিচে দেয়া হয়েছে। যেগুলো আপনারা সংগ্রহ করে আপনাদের ফেসবুকসহ বিভিন্ন টাইমলাইনে শেয়ার করতে পারেন।

যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান,

তত দিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।

দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান,

নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।

আরও পড়ুনঃ

১৫ আগস্ট সম্পর্কে কবিতা

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস কবিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেখা হয়েছে। যারা জাতীয় শোক দিবস কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। তাদের জন্য বিখ্যাত কবিগনের লেখা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস কবিতা নিচে দেয়া হয়েছে। যে কবিতাগুলোর মাধ্যমে আপনারা বিভিন্ন ধরনের জাতীয় শোক দিবস কবিতা লেখা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা

ধন্য সেই পুরুষ – শামসুর রাহমান

ধন্য সেই পুরুষ নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে;
ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে
প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মত উপত্যকায়;
ধন্য সেই পুরুষ হৈমন্তিক বিল থেকে যে উঠে আসে

রঙ বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে।
ধন্য সেই পুরুষ কাহাতের পর মই-দেয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে আসে
ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।

ধন্য আমরা, দেখতে পাই দূরদিগন্ত থেকে এখনো তুমি আসো,
আর তোমারই প্রতীক্ষায়
ব্যাকুল আমাদের প্রাণ, যেন গ্রীষ্মকাতর হরিণ
জলধারার জন্যে। তোমার বুক ফুঁড়ে অহংকারের মতো
ফুটে আছে রক্তজবা, আর
আমরা সেই পুষ্পের দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের
চোখের পলক পড়তে চায় না,
অপরাধে নত হয়ে আসে আমাদের দুঃস্বপ্নময় মাথা।

দেখ, একে একে সকলেই যাচ্ছে বিপথে অধঃপাত
মোহিনী নর্তকীর মতো
জুড়ে দিয়েছে বিবেক-ভোলানো নাচ মনীষার মিনারে,
বিশ্বস্ততা চোরা গর্ত খুঁড়ছে সুহৃদের জন্যে

সত্য খান খান হয়ে যাচ্ছে যখন তখন
কুমোরের ভাঙ্গা পাত্রের মতো,
চাটুকারদের ঠোঁটে অষ্টপ্রহর ছোটে কথার তুবড়ি,
দেখ, যে কোন ফসলের গাছ
সময়ে-অসময়ে ভরে উঠেছে শুধু মাকাল ফলে।
ঝলসে-যাওয়া ঘাসের মত শুকিয়ে যাচ্ছে মমতা
দেখ, এখানে আজ
কাক আর কোকিলের মধ্যে কোনো ভেদ নেই।
নানা ছলছুতোয়

ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল,
গান হয়ে
নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা, যাঁর নামের ওপর
কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের উপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের উপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।

স্বৈরাচারের মাথায় মুকুট পরাচ্ছে ফেরেব্বাজের দল।
দেখ, প্রত্যেকটি মানুষের মাথা
তোমার হাঁটুর চেয়ে এক তিল উঁচুতে উঠতে পারছে না কিছুতেই।
তোমাকে হারিয়ে
আমরা সন্ধ্যায়, হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো হয়ে যাচ্ছিলাম,
আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিল শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সংকটের দিনে
আমরা নিজেদের ধ্বংসস্তূপে বসে বিলাপে ক্রন্দনে
আকাশকে ব্যথিত করে তুললাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্তুতিগানে, কেননা জেনেছি –
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।

১৫ ই আগস্ট কবিতা

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’

এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷
সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷
না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷
আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷

কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’

জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি

সৈয়দ শামসুল হক

এখনও রক্তের রঙ ভোরের আকাশে।
পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে
কবে থেকে ভাসছে বাতাসে।
অপেক্ষায়- শব্দের- শব্দেই হবে সে মুখর- আরো একবার
জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার
পাখায় পড়বে এসে
ইতিহাস থেকে আরো কিছুক্ষণ পরে।
মানুষ তো ভয় পায় বাক্হীন মৃত্যুকেই,
তাই ওঠে নড়ে
থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে।
পাতাগুলো হাওয়া পায়,
শব্দ করে ওঠে আর খাতার পাতাও
ধরে ওঠে অস্থিরতা- কখন সে পাবে স্বর-
জয় বাংলা ঝড়- তাকে দাও
জন্মনাভি! বোঁটা থেকে দ্যাখো আজও
অভিভূত রক্ত যায় ঝরে
বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে।
স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও সুদূরগামী
তেরোশত নদীর ওপরে ওই আজও তো নৌকোয়
রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়!

জাতীয় শোক দিবস

জাতীয় শোক দিবসের কবিতাঃ রফিক আজাদ

এই সিঁড়ি
রফিক আজাদ

এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে –
বত্রিশ নম্বর থেকে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।

মাঠময় শস্য তিনি ভালোবাসতেন,
আয়ত দু’চোখ ছিল পাখির পিয়াসী,
পাখি তাঁর খুব প্রিয় ছিল –
গাছ-গাছালির দিকে প্রিয় তামাকের গন্ধ ভুলে
চোখ তুলে একটুখানি তাকিয়ে নিতেন,
পাখিদের শব্দে তাঁর, খুব ভোরে, ঘুম ভেঙে যেত।
স্বপ্ন তাঁর বুক ভরে ছিল,
পিতার হৃদয় ছিল, স্নেহের-আর্দ্র চোখ –
এ দেশের যা-কিছু তা হোক না নগণ্য, ক্ষুদ্র
তাঁর চোখে মূল্যবান ছিল –
নিজের জীবনই শুধু তাঁর কাছে খুব তুচ্ছ ছিল;
স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে পড়ে আছে
বিশাল শরীর …

তাঁর রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে
সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ
তাঁর ছায়া দীর্ঘ হতে হতে
মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে আদরে
তাঁর রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে –
তাঁর রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে।

এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে –
স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।

সবার সাথে জাতীয় শোক দিবস কবিতা শেয়ার করুন। যাতে সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রকাশিত জাতীয় শোক দিবস কবিতা পড়তে পারে। আরো নতুন নতুন শোক দিবস উপলক্ষে কবিতা পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top