দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | এখান থেকে খুব সহজে জেনে নিন

দই একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার সেই সাথে দুগ্ধজাত খাবার। দুগ্ধজাত এই খাবারটি অধিকাংশ মানুষের কাছে প্রিয়। সুস্বাদু হওয়ার কারণে সকলের চাহিদার মধ্যে থাকে। ছোট বড় সকলেরই এই খাবারটি খুব পছন্দের। গরমের সময় এই খাবারটি খেতে পারলে শরীর অনেক ঠান্ডা হয় এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

দগ্ধজাত খাবার হওয়ার কারণে এর বেশ উপকারিতা রয়েছে। শরীরের পানি দূর করার জন্য খুবই কার্যকারী একটি খাবার। আজকের এই পোস্টে আপনাদের মাঝে তুলে ধরব দই খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো ও অপকারিতা দিকগুলো যা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা আপনি যে খাবার খাচ্ছেন সেই খাবার দ্বারা আপনার শরীরের উপকার হচ্ছে নাকি অপকার হচ্ছে তা অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন।

আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে তুলে ধরেছি। আশা করা যায় আজকের পোস্ট থেকে জানতে পারবেন দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো। এর সাথে আরো জানতে পারবেন টক দই খাওয়ার উপকারিতা, দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা, দই খেলে কি ক্ষতি হয় ও মিষ্টি দই খাওয়ার উপকারিতা তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

দই খাওয়ার উপকারিতা কি

দই পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। সকলেরই কম বেশি পছন্দ এই খাবারটি। তবে দই খাবার উপকারিতা অনেকেরই অজানা। তাহলে চলুন দই খাওয়ার উপকারিতা কি কি জেনে নেওয়া যাক।

যেহেতু দই দুগ্ধজাত খাবার দুগ্ধজাত খাবার হওয়ার কারণে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন বি-২, বি ১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায় এর ফলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তোলে। এর পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখতেও সাহায্য করে। হাড় মজবুত করে, রক্তচাপ কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পাকস্থলীর নানা সমস্যা দূর করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে।

টক দই খাওয়ার উপকারিতা

সাধারণত টক দই ও মিষ্টি দই পাওয়া যায়। এর মাঝে মিষ্টি দই বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু অনেকেরই অজানা টক দই খাওয়ার উপকারিতা কি ও মিষ্টি দই খাওয়ার উপকারিতা কি। এখন আমরা জেনে নিব টক দই খাবার কিছু উপকারিতা।

মিষ্টি দই হোক বা টক দই সকালের নাস্তা খেয়ে নিতে হবে। সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে দই খাওয়া যাবেনা। টক দই খাওয়ার সময় হচ্ছে সকাল বেলা অবশ্যই তার আগে সকালের নাস্তা খেয়ে নিতে হবে। অতিরিক্ত দই খাওয়া যাবেনা স্বাভাবিক মত খাওয়া যাবে। যেমন দুই শত গ্রাম খাওয়া যাবে। অপ্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন একশত গ্রাম করে খেতে পারে।

টক দইয়ে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রয়োজনীয় ফ্যাট, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি১২ সহ প্রয়োজনীয় নানা উপাদান। যা শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনেকটাই কার্যকরী। শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য দই খাওয়া যায় তবে অতিরিক্ত দুই খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। টক দই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, প্রোবায়োটিক অন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে,

এছাড়াও দুধের ঘাটতি পূরণ করে। যারা দুধ খেতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে দই খাওয়া অনেক উপকারী। দই খাওয়ার মাধ্যমে দুধের অভাব পূরণ করা যায় অনেকটাই। দুধের থেকে অধিক ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে এর সাথে ভিটামিনের পরিমাণও অনেক। তাই যারা দুধ খেতে পারে না দুধের ঘাটতি পূরণ করার জন্য নিয়মিত টক দই খেতে পারে।

মিষ্টি দই খাওয়ার উপকারিতা

এরকম ভাবনা হয় মিষ্টি দই খাওয়া ভালো নাকি টক দই খাওয়া ভালো। মিষ্টি দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে তবে মিষ্টি দইয়ের চাইতে টক দইয়ে দ্বিগুণ প্রোটিন থাকে। আমরা উপরে টক দই এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক মিষ্টি দই খাওয়ার উপকারিতা।

বিভিন্ন খাবারের ক্ষতিকর উপাদান থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে আপনার পাকস্থলীকে ঠাণ্ডা রাখতে দই বেশ উপকারী। নিয়মিত দই খেয়ে ত্বক ও চুলের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন। দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ৬ পাকস্থলী সহজে গ্রহণ করে। তাই ভালো হজমের জন্য মিষ্টি দই খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। এতে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে বলে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অ্যাসিডিটি দূর করে। এতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও থাকে।

তাই বলা যায় দই খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। যারা নিয়মিত দই খেতে পারবে তাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে।

দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতা

দই চিড়া খাওয়ার অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বহু পরিচিত চিড়া খিদে দূর করার জন্য দই চিড়া খাওয়া যেতে পারে। চিড়া খাওয়ার মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা রাখা যায় এবং শরীর সতেজ রাখা যায়। এছাড়াও শরীরের পানির অভাব দূর করার ক্ষেত্রে চিড়ার ভূমিকা রয়েছে। তাহলে চলুন দই চিড়া খাওয়ার উপকারিতার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করে- দই দুগ্ধজাত খাবার হওয়ার কারণে এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। পাশাপাশি চিড়া শক্তির এক উৎস, ক্যালসিয়াম এমন এক খনিজ যা শক্তিশালী হাড় ও দাঁত বলায় রাখতে এবং অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করতে দরকারি। প্রায় সমস্ত ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতে জমা থাকে যেখানে এটি তাদের গঠন ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

অন্যান্য খাবারও হজম হতে সাহায্য করে। অন্যদিকে চিড়ায় শর্করা থাকে। শরীর ঠান্ডা রাখে এবং শরীরে শক্তি দেয়। এ ছাড়া ব্লাড সুগারও বাড়ায় না। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের টক দই মেশানো দই-চিড়া খাওয়া উচিত।

দই খেলে কি ক্ষতি হয়

দই খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। এছাড়াও দই দুধের ঘাটতি পূরণ করে। যারা দুধ খেতে পছন্দ করে না তারা দই খেতে পারলে দুধের ঘাটতি পূরণ করতে পারেবে। দই খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো দইয়ে রয়েছে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন বি-২, বি ১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায় এর ফলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তোলে। তাই বলা যায় দই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তবে দই খাওয়ার পর কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন পেঁয়াজ, আম, তৈলাক্ত খাবার এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

কারণ দই তৈরি করার ক্ষেত্রে যেহেতু দুধের প্রয়োজন হয়। দুধ ও পেঁয়াজ একসঙ্গে খেলে অ্যাসিডিটি, গ্যাস, এমনকি বমি পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি এতে হজমেরও সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও ত্বকে র‌্যাশ, একজিমা, সোরিয়াসিস এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এরসঙ্গে গ্যাস, অ্যাসিডিটি এবং বমিভাবের মতো সমস্যাও শুরু হতে পারে।

যদিও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তোলে কিন্তু ভাজা জাতীয় খাবার আর সাথে দই খাওয়া মোটেই ঠিক নয়। দইয়ের সঙ্গে তেলে ভাজা খাবারের সংমিশ্রণ হজমশক্তি কমিয়ে দেয় এবং শরীর অলসতা অনুভব করে।

দই এবং আম একসঙ্গে খেলে শরীরে টক্সিন তৈরি হয়। টক্সিন থেকে দূরে থাকার জন্য অবশ্যই দই ও আম একসাথে খাওয়া উচিত নয় তবে দুধের সাথে আম খাওয়া যায়।

দই খাওয়ার উপকারিতা

দই খাওয়ার কিছু উপকারিতা দিকগুলো আমরা উপরে থেকে জেনেছি। তবে আরো কিছু উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত‌। তাহলে চলুন দই খাওয়ার কিছু উপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা নিয়মিত দই খেতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারবে। দইয়ে থাকা কার্যকর ব্যাক্টেরিয়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও শরীর সুস্থ রাখে। দই ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং এতে আছেল্যাকটোব্যাসিলাস যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

ত্বক উজ্জ্বল করে- দই শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। দই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে এবং শুষ্কত্বক প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ রাখে। এর ল্যাক্টিক অ্যাসিড ত্বক এক্সফলিয়েট করে এবং মৃতকোষ দূর করে। দই ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ ধীর করতে পারে। রূপচর্চায় যে কোনো মুখের প্যাকতৈরি করতে দই ব্যবহার করতে পারেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে- যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা নিয়মিত দই খেতে পারলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারবে। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক যা শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। দইয়ের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া হজমে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যাদূর করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে- ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেকেই নানান ধরনের খাওয়ার বাদ রাখে। এক্ষেত্রে দই ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় দই খেলে ওজন কমানো যায়। খাবারের সঙ্গে দই খাওয়া হলে তা দেহের চর্বি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। এতে দেহের চর্বি কমে এবং সার্বিকভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

রক্তচাপ কমায়- রক্তচাপ কমায় দই, দইয়ে থাকা পটাসিয়াম যা রক্তচাপ কমায় এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা যায়, যারা কম চর্বি যুক্ত দই খান তাদেরউচ্চ রক্ত চাপ তুলনামূলক কম হয়।

আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজেই ধুয়ে উপকারিতা দিক গুলো জানতে পেরেছেন। এখন জেনে নেওয়া যাক দইয়ের কিছু অপকারিতা দিকগুলো যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা উপরে থেকে জানতে পেরেছি দই খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো। এখন আমরা জেনে নিব দই খাওয়ার কিছু অপকারিতা দিকগুলো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক দুই খাওয়ার কিছু অপকারিতা দিকগুলো।

প্রথমে জেনে নেয়া যাক টক দই খাওয়ার উপকারিতা দিক। টক দই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো‌। টক দইয়ে তেমন ক্ষতিকর দিক নেই, তবে টক দই সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে টক দইয়ের গুনাগুন পুরোটা পাওয়া যায় না। এছাড়াও যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে টক না খাওয়াই ভালো। এতে করে ঠান্ডার সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

দইয়ের সঙ্গে কখনও পেঁয়াজ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ দই শরীরকে ঠান্ডা রাখে। অন্যদিকে পেঁয়াজ শরীরকে গরম করে। দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের খাবার হওয়ায় হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

দই খাওয়ার অপকারিতা

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দই খাওয়া নিষেধ বিশেষ করে মিষ্টি দই। সাধারণত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা দই এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এছাড়াও তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার সময় দই খাওয়া উচিত নয় এ ধরনের খাবারের সঙ্গে দই খেলে শরীরে ফ্যাট জমে।

তাই বলা যায় দই এই অপকারিতা গুলো আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

শেষ কথা

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে দই খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো ও অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরার‌। আশা করা যায় এই পোস্ট থেকে আপনারা খুব সহজেই জানতে পেরেছেন উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো। আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে যেগুলো পড়ার মাধ্যমে আপনাদের উপকারে আসতে পারে।

আরও দেখুনঃ

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কমলা খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আপেল খাওয়ার ক্ষেত্রে যা জানা দরকার

এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top