জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- যে বিষয়গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন

জাম সাধারণত গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। গরমের সময় জামের চাহিদা অনেক জাম দেখতে কালো। জাম সুস্বাদু একটি ফল এবং পুষ্টি গুণে ভরপুর। আমরা অনেকেই জামের উপকারিতা বা অপকারিতা দিকগুলো জানিনা। আমরা যে খাবার খাচ্ছি সেই খাবার আমাদের শরীরে কতটুকু ভিটামিন যোগান দিচ্ছে বা শরীর সুস্থ সবল রাখছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

জামে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে যা শরীর সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট। আমরা নানান ধরনের খাবার খেয়ে থাকি এর মাঝে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি অসাস্থ্যকর খাবারও খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা শরীর সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খুব কম খেয়ে থাকি, যা মোটেই ঠিক কাজ নয়‌। তাই আমাদের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যকর খাবার উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে জাম একটি যা আমাদের শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে।

আপনাদের বুঝানোর সুবিধার্থে আজকের এই পোস্টে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে তুলে ধরা হয়েছে আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজেই জানতে পারবেন জাম খাওয়ার উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিকগুলো।

জাম খাওয়ার নিয়ম

জাম একটি পুষ্টিগুণ খাবার। জাম খাওয়ার মাধ্যমে শরীর সুস্থ ও সবল রাখা যায়। তবে জাম খাওয়ার নিয়মটা জেনে রাখা উচিত। জাম খাওয়ার আগে সকালে নাস্তা খেয়ে নিতে হবে। শরীরে জামের পুষ্টিগুণ পাওয়ার জন্য অবশ্যই সকালে নাস্তা খেয়ে নিতে হবে।

জাম খাওয়ার মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা ও সতেজ থাকা যায়। জামে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল রয়েছে এ ছাড়াও ফসফরাস এবং আয়োডিনের মতো খনিজগুলো একসঙ্গে থাকায় জাম খেলে শরীর আর্দ্র থাকে। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে জাম খাওয়া উচিত। সকালে নাস্তা খাওয়ার পর জাম থেকে বিচি ছাড়িয়ে কাপ পানি এবং ১ কাপ বরফ মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে নিন। জামের পরিমাণ রাখতে হবে দুই কাপ। এর সঙ্গে কালো মরিচের গুঁড়ো, লবণ, মধু এবং পুদিনা দিয়ে মজাদার এক শরবত তৈরি করে খেলে সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

জাম খাওয়ার উপকারিতা কি

জাম খাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এবং জামে থাকা প্রচুর ভিটামিন যা শরীর সুস্থ ও সরল রাখে। জামের এই গুনাগুন সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জামের উপকারিতা দিকগুলো কি কি।

জামে রয়েছে ভিটামিন সি, আয়রন, পটাসিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন উপাদান আছে জামে। পেটে ব্যথা, ডায়াবেটিস এবং বাতের ব্যথা সারাতে জাম কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও এই ফল আমাশয় এবং পেট ফাঁপাসহ হজমজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করে।

জামের পুষ্টিগুন অনেক রয়েছে এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা জাম খেতে পারবে। জামে কোনো সুক্রোজ নেই এবং এতে জাম্বলিন আছে, যা স্টার্চকে রক্তে চিনিতে রূপান্তরিত করতে বাঁধা দেয়। জামের মধু ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। হাড়ের গঠন মজবুত করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ব্রণ দূর করে, সংক্রমণ রোধ করে,হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা করে এবং আরো বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে।

জাম খাওয়ার উপকারিতা

জামের উপকারিতা দিকগুলো অনেকেরই অজানা। তবে আপনি যদি জানতে চান জামের উপকারিতা দিকগুলো তাহলে আজকের এই পোস্ট থেকে খুব সহজেই জানতে পারবেন। জামের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যা শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং শরীর সতেজ রাখে। তাহলে চলুন জাম খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে– যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে জাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। নিয়মিত জাম খাওয়ার মাধ্যমে হজম শক্তির বৃদ্ধি করা যায়। জামে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার আছে, যা লিভারকে সক্রিয় করে এবং হজমক্ষমতা বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও দূর করে জাম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে– শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা উচিত। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল খাওয়ার পাশাপাশি জাম খাওয়া যেতে পারে। কারণ জামে রয়েছে ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ এবং বি-৬। সেইসঙ্গে এটি ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ। আরও আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

ব্রণ দূর করে– অনেকেই ব্রণের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত জাম খাওয়া উচিত। জামে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা ব্ল্যাকহেডস, পিম্পলস এবং ব্রণসহ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে। জাম খেলে রক্ত পরিশোধিত হওয়ার কারণেই ত্বক পরিষ্কার হয়ে যায়।

চোখে যত্নে– চোখের স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত জাম খাওয়া যেতে পারে। যারা প্রতিনিয়ত জাম খেতে পারবে তাদের চোখ ভালো থাকবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে– যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে উপকারী একটি ফল। জামে কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকার কারণে এটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ঘন ঘন তৃষ্ণা ও প্রস্রাব এবং দুর্বলতা সমস্য কমাতেও অনেক উপকারী ফল এটি।

সংক্রমণ রোধ করে– জামে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফেকটিভ এবং অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া বৈশিষ্ট্য আছে। এ ফলের মধ্যে ম্যালিক অ্যাসিড, ট্যানিনস, গ্যালিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং বেটুলিক অ্যাসিডও আছে। বিভিন্ন সংক্রমণ রোধে এই ছোট্ট ফলটি কাজ করে। তাই বলা যায় জামের এই উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই জাম খাওয়া উচিত।

হাড়ের গঠন মজবুত করে– জাম বিভিন্ন রোগ দূর করার পাশাপাশি হাড়ের গঠন মজবুত করে‌। যাদের হাড়ের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত জাম খেতে পারলে এই সমস্যা থেকে দূর করতে পারবে। জামে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপদানসমূহ যাহারকে আরো শক্তিশালী ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

দাঁতের যত্নে– জাম দাঁতের যত্নের অনেক কার্যকারী। জাম খাওয়ার মাধ্যমে দাঁতের মাড়ি মজবুত হয় এবং দাঁত ভালো থাকে।

হৃদযন্ত্রের উপকারী– জামে ফসফরাস ও পটাশিয়ামজাতীয় খনিজ থাকার কারণে এটি হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। একারণে জামের মৌসুমে নিয়মিত এটি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বলা যায় হৃদযন্ত্রের উপকারের জন্য নিয়মিত জাম খাওয়া উচিত

জামে থাকা বিভিন্ন গুনাগুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তুলে। বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখে। জামে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তাই বলা যায় রোগ প্রতিরোধ পারিয়ে তোলার জন্য বা শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জামের ভূমিকা রয়েছে। আমাদের উচিত শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য নিয়মিত জাম খাওয়া।

জামের বিচির উপকারিতা

জাম যেমন শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে ও শরীরকে সবল রাখতে সাহায্য করে। তেমনি জামের বিচি খাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জামের বিচির কিছু উপকারিতা দিকগুলো।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বিচির উপকারিতা রয়েছে ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন নামক পদার্থ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জাম খাওয়া উপকারী। বীজগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে প্রত্যেকদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

জামের বীজ সংগ্রহ করার আগে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রেখে সংরক্ষণ করুন। প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্র সংগ্রহ করুন এবং জাম পুরস্কার করে সেই পাত্রে রেখে দিন। জাম ফল থেকে বীজ আলাদা করুন। বীজগুলো সংগ্রহ করার পর ভালোভাবে তা পরিষ্কার করুন খেয়াল রাখবেন গায়ে শাঁস না লেগে থাকে। বীজ গুলো সংগ্রহ করার পর টানা তিন দিন রোদে শুকান। ভালোভাবে শুখিয়ে নেওয়ার পর ব্রিজের বাহিরের খোসা তুলে ফেলুন ভিতরের সবুজ অংশ সংগ্রহ করুন।

সবগুলি ভেঙে আরও কিছুদিন রোদ্রে শুকোতে দিন। এবার শুকনো বীজগুলো মিক্সিতে ভালো করে গুঁড়ো করে নিন । ভাল করে গুঁড়ো করার পর চালুনিতে চেলে নিন। তারপর জামের বীজের গুঁড়ো একটি বায়ু-নিরোধক শিশিতে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন। এক গ্লাস জলে এক চা-চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমরা উপরে থেকে জানতে পেরেছি জাম খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো। জামের গুণাগুণ আমাদের শরীরের জন্য কতটা কার্যকারী আশা করি এই পোস্ট থেকে জানতে পেরেছেন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক কাদের ক্ষেত্রে জাম খাওয়ার পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। জাম খাওয়ার কিছু অপকারিতা দিক রয়েছে তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

জাম খাওয়ার আগে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে চলুন। জাম খাওয়ার আগে লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, খালি পেটে জাম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ জাম খাওয়া ভালো। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত জাম খাওয়া নিষেধ। জাম খাওয়ার পর দুধ খাওয়া নিষেধ, জাম খাওয়ার পর অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যারা প্রতিনিয়ত জাম খেতে পছন্দ করে তাদের ক্ষেত্রে বলা যায় প্রতিদিন একশত গ্রামের বেশি জাম না খাওয়াই ভালো। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জাম না খাওয়াই ভালো। এসব বিষয় খেয়াল রাখে অবশ্যই জাম খাওয়া উচিত

জামের ছবি

আপনারা অনেকেই জামের ছবি সংগ্রহ করতে চান। তাই আমরা এই পোস্টে জামের ছবি তুলে ধরেছি। আশা করি আজকের এই পোস্টে থাকা ছবিটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। জামের ছবি নিচে দেয়া হয়েছে সংগ্রহ করে নিন।

জামের ছবি

শেষ কথা

আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজেই জানতে পেরেছেন জামের উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো। যদি আজকের এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে তারাও এ বিষয়ে জানতে পারব। আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল রয়েছে আপনারা চাইলে পড়তে পারেন।

আরও দেখুনঃ

কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কমলা খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আপেল খাওয়ার ক্ষেত্রে যা জানা দরকার

এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যায়াম করার নিয়ম – দেখুন ঘরে ব্যায়াম করার নিয়ম

পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যায়াম করার নিয়ম – দেখুন ঘরে ব্যায়াম করার নিয়ম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top