নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকে আমরা কথা বলবো নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। বাঙালি নিম পাতা প্রিয় মানুষ। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ নিম পাতা খেতে ভালোবাসে। তাই অনেকে ইন্টারনেটে নিম পাতার উপকারিতা ও নিম পাতা খাওয়ার সঠিক সময় জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে। আজকের এই পোস্টে আমরা শিশুদের নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করেছি। তাই আজকের এই পোস্ট থেকে নিম পাতার উপকারিতা জেনে নিন। আরও জানতে পারবেন কখন নিম পাতা খেতে হয়।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম পাতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন। তাই এটা আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা সব সময় নিম পাতা খেতে ভালোবাসে। তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট এ নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।

স্বাস্থ্য রক্ষায় নিমের উপকারিতা

  • গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিম এর মধ্যে রয়েছে দুর্দান্ত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা শরীর থেকে যে কোন রোগ জীবাণু কে সরাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি যে কোনো ধরনের রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
  • অত্যধিক রক্তচাপের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হল নিম পাতা। নিম শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে এবং রক্ত বিশুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • হাঁপানি, অ্যাজমার মতন কষ্টকর ব্যধিতে যারা ভুগছেন তাদের জন্য সুখবর। আপনার বাড়ির পাশে থাকা নিমগাছটি আপনার সুস্থতার কারণ হতে পারে। নিম গাছের ফল এবং বীজ থেকে পাওয়া নিম তেল হাঁপানির চিকিৎসায় সহায়তা করে।
  • গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে কোন ধরনের পেটের রোগ, আলসার কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় নিমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত নিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে যদি দৈনিক জলে মিশিয়ে খাওয়া যায় এক্ষেত্রে পেটের আলসারের সমস্যাগুলির সমাধান হতে পারে।
  • রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে নিমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যে কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গবেষণায় লক্ষ্য করা গিয়েছে, নিম হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব প্রদর্শন করতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যবহারের ফলে উপকার মেলে।
  • দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার হল নিম। নিম তেল দাঁতের মাড়ির যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে। নিমের নির্যাসযুক্ত মাউথ ওয়াশ মুখের স্ট্রেপটোকক্কাস মিউট্যান্সের বৃদ্ধিকে প্রশমিত করে। এই ব্যাকটেরিয়ার ফলে মুখের সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়াও তেল পরিশোধন এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে নিম তেলকে বিভিন্ন টুথপেস্টে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • বর্তমানে ভারতে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে আমাদের মাঝে সব বয়সের মানুষদেরই নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন। কেননা নিম পাতায় রয়েছে পলি স্যাকারাইডস এবং লিওমনোয়েডস নামক দুটি উপাদান যা আমাদের রক্ত থেকে ক্যান্সার এবং টিউমারেরর কোষকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে।

ত্বকের জন্য নিম পাতার উপকারিতা

  •  গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিম এবং হলুদের মিশ্রণ ত্বকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষ্যণগুলি নির্মূল করে। আলসার কিংবা ত্বকের যেকোনো দাগ-এর চিকিৎসা নিম দিয়ে করা হয়ে থাকে।
  • তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তাদের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল ব্রণ। তবে এক্ষেত্রে এটি নিরাময়ের জন্য হাতের কাছেই রয়েছে নিমপাতা। পাশাপাশি যে সমস্ত ব্রনর কারনে ব্রেকআউট ত্বকে দেখা যায় সে গুলির সমাধানেও নিমপাতা ব্যাবহার করতে পারে। নিম পাতা এবং হলুদের পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে মুখে ব্রনর দাগ কমে যেতে সহায়তা করে এবং এটি ত্বককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং উজ্জ্বল করে তোলে।

চুল পরিচর্যায় নিমের উপকারিতা

  • সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল পরিষ্কার চুলের স্বপ্ন সবারই থাকে। কিন্তু উকুন এবং খুশকির মতো সমস্যাগুলি চুল সুস্থ থাকতে দেয় না। তাই চুলের সৌন্দর্য প্রদানে নিম পাতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিমপাতার ব্যাবহারের ফলে চুল থেকে উকুন-এর সমস্যা দূর হয়।
  • মাথার ত্বক অত্যধিক শুষ্ক কিংবা তৈলাক্ত যাই হয়ে যাক না কেন আমাদের খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে নিম পাতার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া নাশক ও ছত্রাক নাশক উপাদান থাকার জন্য এটি চুলের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।

নিমের পুষ্টিগুণ

এক কাপ নিমপাতার পুষ্টিগত মান :

এক কাপ নিমপাতার পুষ্টিগত মান :
এক কাপ নিমপাতা 35 গ্রাম
ক্যালোরি 45
প্রোটিন 2.48 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট 8.1 গ্রাম
ফ্যাট 0.03 গ্রাম
ক্যালসিয়াম 178.5 মিলিগ্রাম
আয়রন 5.98 মিলিগ্রাম
ফাইবার 6.77 গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম 44.45 মিলিগ্রাম
ফসফরাস 23 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম 88.9 মিলিগ্রাম
সোডিয়াম 25.27 মিলিগ্রাম

দৈনিক 35 গ্রাম নিমপাতা গ্রহণ করা যেতে পারে।

নিম পাতার ব্যবহার

জেনে নিন নিম পাতার সঠিক ব্যবহার। নিচে বিস্তারিত দেয়া হল –

১) ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হজম সংক্রান্ত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ এ ধরনের সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে নিম পাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

২)সকাল বেলা খালি পেটে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন কিংবা খাদ্যতালিকায় নিমপাতা সিদ্ধ রাখতে পারেন।

৩) দৈনিক নিমপাতার গ্রহণ করার ফলে শরীর থেকে জীবাণু মুক্ত থাকবে। তাই প্রতিদিন নিম গ্রহণ করতে পারেন।

৪) এছাড়াও যারা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা নিম তেল পান করতে পারেন।

৫) কিংবা যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিমপাতা সিদ্ধ খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

৬) এছাড়াও নিমপাতা রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীরা ও তার খাদ্যতালিকায় নিমপাতা রাখতে পারেন।

৭) এছাড়া দাঁত এবং মাড়ির ক্ষেত্রেও নিমপাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই নিম পাতা ব্যবহার করার আগে আপনার রোগ অনুযায়ী আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন যে এটি আপনার শরীরে কার্যকর কিনা।

৮) আবার ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে নিম পাতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ত্বকের যেকোনো ধরনের সমস্যা যেমন ব্রন, র্সযা ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৯) সেক্ষেত্রে নিমপাতা দিয়ে ঘরে টোনার, ফেসপ্যাক তৈরি করে নিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি খুব কম সময়ের মধ্যেই আপনার ত্বককে সুস্থ এবং সুন্দর করে তুলতে সহায়তা করবে।

১০) চুলের সমস্যার ক্ষেত্রে ও নিমপাতার ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকে উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্য সম্মত করে তোলার জন্য চুলে নিম পাতার তেল, নিম পাতার প্যাক কিংবা নিমপাতা দিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সিরাম তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।

নিম সর্বসম্মতভাবে আপনাকে স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং সুন্দর থাকতে সহায়তা করবে।

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা

নিম পাতা সেদ্ধ পানি গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে নিন। যাদের স্কিন ইরিটেশন এবং চুলকানি আছে তাদের এতে আরাম হবে আর গায়ে দুর্গন্ধের ব্যাপারটাও কমে যাবে আশা করা যায়।

নিম পাতার উপকারিতা  অ্যালার্জি

এলার্জির সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। এলার্জির কারণে যখন-তখন অস্বস্তিতে ভোগেন অনেকেই। এলার্জি শুধু চুলকানি নয়, হাঁচি-কাশি কিংবা হাঁপানিও এলার্জির মধ্যে পড়ে। এর সমস্যা যে কতোটা ভয়ঙ্কর, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন।

এলার্জির কারণে অনেকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ রাখেন প্রিয় খাবারদাবার। যেমন- গরুর দুধ, হাঁসের ডিম ডিম, ইলিশ, চিংড়ি, পুঁটি, বোয়াল, বেগুন, কচু, গরুর মাংস, হাঁসের মাংস ইত্যাদি। কারণ এলার্জির কারণে অনেকের ত্বক চুলকাতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে চাকা হয়ে লাল হয়ে যায়। কারও চোখ চুলকায়, এ থেকে পানি পড়া ও চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে।

চর্মরোগ, হাঁপানি ও নাক দিয়ে পানি পড়া বা হাঁচির সমস্যাও হয় এলার্জির কারণে। তাই থেকে মুক্তি পেতে অনেকে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে ওষুধ ছাড়াও এলার্জি দূর করা সম্ভব। নিম পাতার মিশ্রণে এক মাসের মধ্যে সহজ উপায়ে এলার্জিকে চিরবিদায় করা যায়।

নিম পাতার অপকারিতা

  • ১) ছোট বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে নিম তেলের ব্যবহার কিংবা নিম তেল খাওয়া মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি ভাব, দুর্বলতা মস্তিষ্কের ব্যাধি দেখা দিতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
  • ২) গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নিম পাতা সহায়ক নয়। এটি গর্ভপাতের অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়াও প্রসূতি মহিলাদের ও নিমপাতা থেকে দূরে থাকা উচিত। এর ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • ৩) আপনার যদি অটো ইমিউন থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি নিম পাতার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কেননা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা টিকে খুব সক্রিয় করে তোলে। যার ফলে যারা অটোইমিউন রোগের শিকার তাদের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  • ৪) যারা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে নিমপাতা ব্যবহার করা যথাযথ নয়। এটি কেননা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তারা নিমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  • ৫) নিম অনেক সময় বন্ধ্যাত্বতার কারণ হতে পারে। তাই যারা সন্তানের পরিকল্পনা করছেন তারা নিম থেকে দূরে থাকুন।
  • ৬) এছাড়াও কোন শল্যচিকিৎসার আগে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে থেকে নিমের ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
  • ৭) মনে রাখবেন দিনে দুটোর বেশি নিমপাতা একেবারে খাওয়া উচিত না। বেশি পরিমাণে এটি গ্রহণ করা শুরু করলে উপকারের বদলে অপকার হবে।
  • ৮) এছাড়া নিমপাতা গ্রহণের পরে যদি বমি, ডায়েরিয়া, মাথাব্যথা সমস্যাগুলি হয় সে ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।
  • ৯) এছাড়া আপনার শরীরে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী টানা কতদিন নিম পাতা খাওয়া যেতে পারে সেটা একজন বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নেওয়া উচিত। কারণ একনাগাড়ে এটি খেতে থাকলে শরীরের নানা ক্ষতি দেখা যায়।
  • ১০) খালি পেটে নিম পাতা বেশিদিন খাবেন না। এতে উপকারের বদলে অপকার হবে।

সর্বশেষ কথা

আশা করি আজকের পোস্ট এর সাহায্যে সবাই নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের যদি নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্ট ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন। যাতে সবাই নিম পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

আরও দেখুনঃ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top