আজকে আমরা কথা বলবো মধু খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। বাঙালি মধু প্রিয় মানুষ। তাই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মধু খেতে ভালোবাসে। তাই অনেকে ইন্টারনেটে মধুর উপকারিতা ও মধু খাওয়ার সঠিক সময় জানতে চেয়ে অনুসন্ধান করে। আজকের এই পোস্টে আমরা শিশুদের মধু খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করেছি। তাই আজকের এই পোস্ট থেকে দেশী মধু উপকারিতা জেনে নিন।
মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
মধুর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন। তাই এটা আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। তাই আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা সব সময় মধু খেতে ভালোবাসে। তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট এ মধু খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।
- মধু র*ক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।
- শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগে মধু উপকারী।
- মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- মধু হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- যৌ*ন দুর্বলতা কাটাতে মধু উপকারী।
- মধু পানিশূন্যতা রোধ করে।
- তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য
- মধু হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
- এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদ্রোগের টনিক হিসেবে কাজ করে
- মধু উচ্চ র*ক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- মধু পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে ওজন কমে।
- মধু দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
- শীতের ঠান্ডায় মধু শরীরকে গরম রাখে
মধু খাওয়ার নিয়ম ও সময়
সঠিক পদ্ধতিতে মধু খেলে আপনি যেমন ভীষণ উপকার পাবেন তেমনি ভুল পদ্ধতিতে এটি সেবন করলে দেখা দিতে পারে নানান জটিলতা।
- মধু খাওয়ার সবথেকে ভালো সময় সকালে খালি পেটে মধু খাওয়া।
- নতুন সংগ্রহ করা মধু থেকে ও পুরাতন মধু বেশি কার্যকরী।
- লেবুর রসের সঙ্গে কাঁচা মধু মিশ্রিত করে খেলে অ্যাসিডিটি কমে।
- হজমের সমস্যা দূর করতে প্রতিবার ভারি খাবার খাওয়ার আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন।
- র*ক্তনালীর সমস্যা দূর করতে মধুর সঙ্গে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও মধু ও দারচিনির এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
- লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে ও লিভার পরিস্কার থাকে।
- যৌ*ন দুর্বলতা কাটাতে প্রতিদিন ছোলার সঙ্গে মধু সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- দুই চা চামচের সমপরিমাণ মধু ও বাসকপাতার রস মিশিয়ে খেলে সর্দি ও কাশি সেরে যায়।
- তুলসী পাতার এক চা চামচ রস ও সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাশি দূর হয়।
- কচি বেল ও আমগাছের কচি চামড়া বাটার সঙ্গে গুড় ও মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়ে যায়।
- মধুর সঙ্গে গুড়ের রস মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
- এক চা চামচ আদার রস এবং এক চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও সন্ধেবেলা খেলে সর্দি সেরে যায় ও খিদে বৃদ্ধিপায়।
মধুর পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ থাকে। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শুধুমাত্র দেহের বাহ্যিক দিকের জন্যই নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।
ত্বকের যত্নে মধু
মধু ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হয়। এছাড়া ব্রণ, বলিরেখা ও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে পারে এ প্রাকৃতিক উপাদান। নিচ থেকে জেনে নিন কীভাবে মধু দিয়ে তৈরি করবেন বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক-
মধু
- ১ চা চামচ মধু সরাসরি মুখে লাগান। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ত্বক। প্রতিদিন ২ বার লাগালে ত্বকে আসবে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।
দই ও মধু
- দই ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করুন ফেসপ্যাক। হাত-পা ও মুখের ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে কোমল হবে ত্বক।
বেকিং সোডা ও মধু
- মধু ও বেকিং সোডা একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মুখ। সপ্তাহে ২/৩ বার ফেসপ্যাকটি মুখে লাগালে ব্রণ দূর হবে।
মধু ও দুধ
- মধু ও দুধের মিশ্রণ মুখসহ পুরো শরীরে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কালচে দাগ দূর করবে এটি।
চন্দন, মধু ও পেঁপে
- মধুর সঙ্গে চন্দনের গুঁড়া ও পাকা পেঁপে মেশান। এই ফেসপ্যাকটি নিয়মিত ত্বকে লাগালে রোদে পোড়া দাগ দূর হবে।
মধু ও ডিম
- ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী এ ফেসপ্যাকটি। ডিমের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক টানটান করতেও সাহায্য করবে এটি।
মধুর অপকারিতা
মধুর তেমন কোন অপকারিতা নেই। কিন্তু মধু বেশি খাওয়া উচিৎ না, কারন অতিরিক্ত মধু খেলে গাঁয়ের মধ্যে অস্থিরতা বা জ্বলা ভাব হতে পারে। সুতরাং মধু পরিমিত খাওয়া উচিত।
সর্বশেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্ট এর সাহায্যে সবাই মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের যদি মধু উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্ট ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন। যাতে সবাই মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ