জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া বাংলা ও আরবি

জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া বাংলা ও আরবি

অনেকেই খারাপ জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া বাংলা ও আরবি জানার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে কি দোয়া পড়ার মাধ্যমে জ্বীনের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। আমাদের চারপাশে অনেকেই আছেন যারা কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে যে সময় আমাদের খারাপ জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকতে বলে।

আপনার কাছের কোন মানুষ যদি সন্ধ্যাবেলা বা ভর করে কোন খারাপ কিছু দেখে ভয় পায়। তাহলে তাকে নিম্নে উল্লেখিত দোয়া করার মাধ্যমে রুকাইয়া করতে পারেন। ইসলাম ধর্ম মতে অনেকেই খারাপ জ্বীনের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই আপনিও যদি জিনের হাত থেকে বাঁচতে চান তাহলে এই দোয়া পাঠ করুন।

জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া

ইসলামিক বিভিন্ন হাদিসে জিনের হাত থেকে বাঁচার জন্য নির্দিষ্ট কিছু দোয়া রয়েছে। অন্যদিকে সকাল বিকাল করার জন্য কিছু কোরআন থেকে সূরা ও বিশেষ আমল রয়েছে। যেগুলো করার মাধ্যমে যে কেউ জেনে হাত থেকে বাঁচতে পারে। তাই আজকের এই পোষ্টের নিচে থেকে দেখে নিন জিনের হাত থেকে বাঁচার সকল দোয়া সমূহ।

জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া বাংলা

অনেকেই আছেন যারা আরবি পড়তে পারেন না তাদের জন্য বাংলা দোয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবশ্যই চেষ্টা করবেন আরবি পড়তে শেখার জন্য কারণ শুধু বাংলা পড়ে আরবি সহি শুদ্ধ করা যায় না। আপনি যদি জিন দ্বারা ভয় পেয়ে থাকেন। তাহলে নিচে থেকে জিমেইল হাত থেকে বাঁচার দোয়া বাংলা পাঠ করুন।

জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া আরবি

যারা আরবি পড়তে পারেন তারা খুব সহজে জিনের হাত থেকে বাঁচার দোয়া আরবি নিচে থেকে পাঠ করতে পারবেন। নিচে কিছু নির্দিষ্ট সূরা ও আয়াত দেয়া হলো যেগুলো সকাল ও সন্ধ্যা আমল করবেন। নিজে আমল করুন ও অন্যকে আমল করতে সাহায্য করুন।

রাসুল (সাঃ) বলেন, যে বেক্তি সকালে ১ বার ও বিকালে ১ বার আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, শয়তান থেকে সারাদিন সে আল্লাহ্‌র আশ্রয়ে থাকবে। (সহিহ তারগিব)

২- “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল ও বিকালে সূরা ইখলাস, ‘সূরা ফালাক’ ও ‘সূরা নাস’ তিনবার করে বলবে, এটাই তার সবকিছুর জন্য যথেষ্ট হবে। (আবূ দাউদ; তিরমিযী)

৩- রাসুল (সাঃ) বলেন, যে বেক্তি সকালে ৩ বার ও সন্ধ্যায় ৩ বার নিম্নোক্ত দুয়াটি বলবে, তাহলে কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। (সহিহ আবুদাউদ) «بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ».

(বিস্‌মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্‌মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম)।
“আল্লাহ্‌র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”

৪- “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : পেশাব পায়খানার স্থানে জিন শয়তান থাকে। অতএব তোমাদের কেহ যখন এখানে আসে সে যেন বলে,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبائِث».

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খাবা-ইস

হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অপবিত্র পুরুষ জিন্ ও নারী জিন্ থেকে আশ্রয় চাই”। (ইবনে হিব্বান, বুখারী, মুসলিম)

এছাড়াও “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন কারণ গর্ত হল জিনদের থাকার জায়গা”। (সহীহ্-আবু দাউদ)

৫- “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : “যখন তোমাদের কেউ ঘরে প্রবেশ করে, আর প্রবেশের সময় ও খাবারের সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান (নিজ ব্যক্তিদের) বলে, তোমাদের কোনো বাসস্থান নেই, তোমাদের রাতের কোনো খাবার নেই।” (মুসলিম)
অর্থাৎ খাওয়ার সময় ও ঘরে প্রবেশের সময় বলতে হবে-

«بِسْمِ اللَّهِ»

(বিসমিল্লাহ) “আল্লাহর নামে।”

৬- রাসুল (সাঃ) বলেন : যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে শয়তান সারা রাত তার নিকটে যাবে না।(বুখারী)

৭- রাসুল (সাঃ) বলেন : যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে তখন সে যেন তার মুখে হাত দিয়ে বাধা দেয়। কারণ হাই তোলার সময় শয়তান প্রবেশ করে”।(মুসলিম)

ছোট শিশুদের কিভাবে জীন শয়তান থেকে নিরাপদে রাখা যায় —

১- রাসুল (সাঃ) বলেন : সন্ধ্যা বেলায় তোমাদের সন্তানদের বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে। কারণ, তখন শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। (বুখারী)

২- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-এর জন্য এই বলে (আল্লাহ্‌র) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-
«أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ».

(উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্‌)।

“আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।”(বুখারী)

৩- রাসুল (সাঃ) বলেন : নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করে সহবাস করলে উক্ত সহবাসের ফলে সৃষ্ট সন্তানের কোন ক্ষতি শয়তান করতে পারে না”।(বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী)

«بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا».

(বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রযাকতানা)।

“আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন।”

জিনের হাত থেকে বাচার আমল

ইসলামিক হাদিস অনুসারে ও কুরআন থেকে জেনে হাত থেকে বাঁচার আমল ও সূরা নিচে দেওয়া হল। বিস্তারিত জানুন ও জ্বীনের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমল করুন।

  • সর্বদা পবিত্র থাকা। কোনো কারণে গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করা।
  • পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ও শরিয়ত মোতাবেক চলা।
  • ঘরে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া পড়া। ঘরে প্রবেশের সময় সালাম করে প্রবেশ করা।
  • প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় দোয়া পড়া। সেখান থেকে ফিরেও দোয়া পড়া। কারণ এসব জায়গায় দুষ্ট জিনদের আনাগোনা বেশি থাকে।
  • ঘরে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা।
  • প্রতি নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমানো।
  • খাবারের সময় মাসনুন দোয়া পড়া। কারণ দোয়া না পড়লে দুষ্ট জিনের আমাদের খাবারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে। গোশত খাওয়ার পর হাড়গুলো পানিতে না ফেলা, কারণ এগুলো জিনদের খাবার। এগুলো নষ্ট করলে তারা কষ্ট পায়। অনেক ক্ষেত্রে এ কারণেও আক্রমণ করে বসতে পারে।
  • ঘরে কোনো প্রাণীর কঙ্কাল ও মূর্তিজাতীয় জিনিস না রাখা। নয়. নির্জন বা ময়লার স্তূপ, আগুনের কুণ্ডলীর কাছে একাকী না যাওয়া।
  • জনমানবহীন স্থান, গভীর জঙ্গলে রাতের বেলায় একা সফর না করা।
  • কোনো অবস্থায় ভয় পাওয়া যাবে না। কারণ ভয় পেলে তারা আরো বেশি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে।
  • ভরদুপুর ও সন্ধ্যায় বাচ্চাদের ঘরের বাইরে না রাখা। তের. সকাল-সন্ধ্যা এবং শোবার সময় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার করে পড়ে হাতের মধ্যে ফুঁক দিয়ে শরীরে মুছে নেওয়া।
  • সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বিসমিল্লাহ বলে ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখা। পনের. নারী ও শিশুদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে না দেওয়া। রাতের এক প্রহর যাওয়ার পর এ বাধ্যবাধতা নেই।

জেনে হাত থেকে বাঁচার দোয়া আল্লাহ চাইলে আপনাকে অনেকটা সাহায্য করবে। তারপরও যদি জিন সমস্যা করে তাহলে ভালো কোনো রাকি দেখে রুকাইয়া করান। কবিরাজ ও ভন্ডদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া থেকে দূরে থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top