২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা | ১৯৭১ সালের কালো রাত নিয়ে রচনা

১৯৭১ সালের 25 মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতি বছর মার্চ মাসের 25 তারিখে পালন করা হয়। 25 মার্চ কালো রাতের ঘটনা বাঙালির মনে এখনো দাগ কেটে আছে। ১৯৭১ সালের গণহত্যা সম্পর্কে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই আপনাদের জন্য কাল রাত ও গণহত্যা দিবস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 25 মার্চ কালো রাতে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী।

পঁচিশে মার্চ রাতে বাংলার মানুষ যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন সেই নিরপরাধ বাঙালির উপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গোলাবর্ষণ থেকে শুরু করে নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। যার ফলে সেই দিনটিকে বাংলার মানুষ স্মরণীয় করে রাখার জন্য গণহত্যা দিবস হিসেবে 25 শে মার্চ এই দিবসটি পালন করে। যারা 25 মার্চ গণহত্যা দিবস রচনায় অংশগ্রহণ করবেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টের 25 মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা উল্লেখ করা হয়েছে।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা

গণহত্যা দিবস নিয়ে রচনা তৈরি করা হয়েছে সবার জন্য। 25 মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা মাঝে 1971 সালের 25 মার্চ রাতে কি ঘটেছিল সেই সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ রচনা তৈরি করা হয়েছে। তাই আপনি যদি 25 মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করতে চান। তাহলে আমাদের থেকে ভালো মানের 25 মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা সংগ্রহ করে নিন।

২৫ মার্চ কি দিবস, ইতিহাস, গণহত্যা দিবস কেন পালন করা হয়

১৯৭১ সালের কালো রাত নিয়ে রচনা

ভূমিকাঃ ১৯৪৭ সালের আগষ্টে ভারতীয় উপমহাদেশের ৩০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ব্রিটিশ ইডিয়া দুইটি স্বাধিন উপমহাদেশে ভাগ হয়ে যায়। দুই ভাগের মধ্যে এক ভাগ ছিল হিন্দু ধর্মাবলী নিয়ে যা আমরা ভারত নামে চিনি এবং অপরটি ছিল মুসলিম ধর্মাবলী নিয়ে যা আমরা পাকিস্তান নামে চিনি। পাকিস্তান দেশটি শুধু ধর্মেই একতাবদ্ধ। অর্থ ,সরকার, সম্পদ সবই পশ্চিম পাকিস্তানের দখলে। অন্যদিকে ভারতের আরেক দিকে হাজার হাজার মাইল দূরের পূর্ব পাকিস্তান জর্জরিত দারিদ্র আর দুঃখ-কষ্টে। এই দুই বিচ্ছিন্ন অংশের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিবাদ দেখা দেয় তা হলো ভাষা নিয়ে। তাদের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে।

স্বাধীনতার পূর্ব ইতিহাসঃ পাকিস্তানের ৫৬% ভাগ মানুষ কথা বলতো বাংলা ভাষাতে যেটা মূলত পুর্ব বাংলার মাতৃভাষা। আর বাকি ৪৪% কথা বলতো উর্দু ভাষাতেযা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা। আর তাই পশ্চিম পাকিস্তান জোরপূর্বক তাদের মাতৃভাষা উর্দু পূর্ব বাংলার মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছিলো। তাদের সবসময় মনে হয়েছে তারা যেন পসচিম পাকিস্তানের উপনিবেশ। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন পুর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রাভাষা হবে উর্দু। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের কাছ থেকেও একই ঘোষনা আসে। এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারী হরতালের ডাক দেয়।

১৯৫২ ভাষা আন্দোলনঃ ১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলা চত্ত্বরে ছাত্ররা অবস্থা নেয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চায় শ্লোগান দিতে দিতে তারা যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন পুলিশ মিছিলি এর উপর গুলি বর্ষন শুরু করে। এতে শহীদ হন সালাম, বরকত ,রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারী ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার উদ্বোধন করা হয়। তখনো পশ্চিম পাকিস্তান থেমে যায় নি। শহীদ মিনারের সেখানেও হস্তক্ষেপ করে।

পরেরদিন পুলিশ শহীদ মিনার ভেঙ্গে দেয়। এতে করে আন্দোলন আরো ছড়িয়ে পড়ে। ৪ বছর পর ১৯৫৬ সালে সঙ্ঘঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র। গণপরিষদ থেকে পাকিস্তান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রে গঠিত হয়। পশ্চিম প্রদেশের নাম দেয়া পসচিম পাকিস্তান এবং পূর্ব বাংলার নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু নাম পরিবর্তন করলেই তো শাসকগোষ্ঠীর আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায় না।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনঃ এই প্রেক্ষিতে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিৎ একটি রাজনৈতিক বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের সায়িত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেষ করেন। আইয়ুব খানের নির্যাতন নিপিড়ন এর বিপক্ষে যখন এটি পেষ করা হয় তখন এর পক্ষে জনসমর্থন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই একটি ঘটনা যেখানে জনসমবেশের সমর্থন খুব দ্রুত পাওয়া যায়। যখন জনগণ শেখ মুজিবকে আস্তে আস্তে পছন্দ করা শুরু করল তখন শেখ মুজিবর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের অপছন্দের তালিকায় পড়ে যেতে

১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান সরকার শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। এছাড়া আগরতলা ষড়যন্ত্রের আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হকক কারাবন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। এভাবে একের পর এক অত্যাচার চালানো শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তান। আর এতে করে বৃদ্ধি পেতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আন্দোলন ও। ২৪ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালের গনঅভ্যুত্থান।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুন খান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সমাপ্তি ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খান। শাসকঘোষ্ঠী আগরতলা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবুর রহমানেরও কারা মুক্তি মিলে। সে বছরই রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেন। ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচন। আওয়ামী লিগ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও ক্ষমতায় আস্তে দেয়নি ইয়াহিয়া খান। ইয়াহিয়া খান তার প্রতিশ্রুতি ভঙ করে । আন্দোলনের হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়াদানে ভাষণঃ এরপর ৭ই মার্চ রেস্কোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষন দেন যা মানুষের মধ্যে আরো উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়। এতে করে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।

২৫ মার্চের কালো রাতঃ এর মধ্যে হঠাৎ ২৫ শে মার্চ রাত ১২টায় চালানো হয় নিররীহ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর নির্মম অত্যাচার। এসব দেখে বঙবন্ধু টের পান যে হয়ত তাকে খুন করা হবে অথবা তাকে গ্রেফতার করা হবে। ২৬ মার্চ সকালে তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার এর বাসা থেকে ওয়্যারলেস যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।

স্বাধীনতা অর্জনঃ এটি চটগ্রামে প্রেরণ করা হয়। চট্রগ্রামের আগরাবাদ থেকে দুপুরবেলা আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ঘোষনা পত্রটি পাঠ করেন। এদিকে অপারেশন সার্চলাইট এর মূল টার্গেট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ যুবকদের। ২৫ মার্চ কালরাতের তাদের নীল নকশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয় মৃত্যুপুরিতে। ২ দিনে ৫ শতাধিকেরও বেশি ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। ৯ মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর অর্জিত হয় আমাদের গৌরাবন্বিত স্বাধীনতা। আর এই সবকিছু শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস দিয়ে।

উপসংহারঃ বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়। নানা অত্যাচার নিপিড়ীন সহ্য করে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে। সকল শহীদ আমাদের জন্য গৌরব।

আমরা চেষ্টা করেছি 25 শে মার্চ গণহত্যা দিবস অনেক ভালো মানের রচনা আপনাদের দেওয়ার জন্য। আশা করি আপনাদের গণহত্যা দিবস রচনা টি ভালো লেগেছে। তাই আজকের এই পোস্ট সবার সাথে শেয়ার করুন যাতে সবাই 25 মার্চ গণহত্যা দিবস রচনা খুঁজে পায়।

Read More

স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা, বক্তব্য, ভাষণ ও তাৎপর্য

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা | ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা | ১৭ মার্চ এর রচনা

৭ মার্চ কি দিবস – ৭ মার্চের ভাষণ কেন বিখ্যাত জানুন

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা – ১০০০ শব্দের

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *