ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ – দেখুন বিস্তারিত

আপনারা যারা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ জানতে অনুসন্ধান করছেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টের ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আপনারা ঘরে বসে কিছু লক্ষণ দেখার মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারবেন কারো ডেঙ্গু হয়েছে কিনা। বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

তাই আমরা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলো তালিকাকারী এখানে উপস্থাপন করেছে। তাই আপনার আশেপাশের যদি কারো ডেঙ্গু রোগ হয়েছে বলে মনে হয়। তাহলে নিচে থেকে লক্ষণ গুলো দেখে তার সাথে মিলিয়ে দেখুন।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমড়, পিঠসহ অস্থি সন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে মনে হয় বুঝি হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই এই জ্বরের আরেক নাম “ব্রেক বোন ফিভার”।

জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র‌্যাশ, অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, এমনকি বমি হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায় এবং কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এর ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসে। একে “বাই ফেজিক ফিভার” বলে।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর : – এই অবস্থাটাই সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয়, তা হল- শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়, যেমন চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।

এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনীতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম : – ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হল-

– রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।

– নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।

– শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

– প্রস্রাব কমে যায়।

– হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের কারণঃ

ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই জাতীয় মশা কামড় দিলে প্রধানত ডেঙ্গুজ্বর হয়ে থাকে। কোন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত লোককে এ জাতীয় মশায় কামড়ায় এবং পরবর্তীতে ঐ একই মশা যদি কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে উক্ত সুস্থ ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে ভোগার সম্ভাবনা অনেক বেশী। সাধারণত জীবাণু বহনকারী এডিস মশা কোনো মানুষকে কামড়ানোর চার হতে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এভাবে ক্রমাগত মশার মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে রোগটি ছড়াতে থাকে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়ঃ

ডেঙ্গু জ্বরের বাহক যেহেতু মশা তাই এই বাহকের প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য ডেঙ্গুবাহী মশার বংশবিস্তার রোধের পাশাপাশি মশা যেন আপনাকে কামড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এডিস মশা যেহেতু অভিজাত এলাকায়, বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় বসবাস করে ও সেখানে থাকা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে তাই এসব আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এ রোগের বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ। এজন্য নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া উচিত।

বাড়ির আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জলাশয় কিংবা জঙ্গল থাকলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফেলতে হবে।
এডিস মশা যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে তাই বাসার ফুলদানি, কোন অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, কিংবা পরিত্যক্ত টায়ার থাকলে সেগুলি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরের বাথরুম বা অন্য কোথাও পাঁচদিনের বেশি পানি জমানো অবস্থায় না থাকে যেমন অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচের অংশ ইত্যাদি।
এডিস জাতীয় মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়িয়ে থাকে। এজন্য দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড় ঢেকে রাখতে, প্রয়োজন হলে মসকুইটো রিপেলেন্ট লাগানো যেতে পারে।
মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারীর নেট লাগাতে হবে।
দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হাফ প্যান্ট না পরিয়ে তাদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে তারপর স্কুলে পাঠানো উচিত।
মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সাথে মশার কামড় থেকে বাচতে দিনে কিংবা রাতে মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বপরি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে উক্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যেন কোনো মশা তাঁকে কামড়াতে না পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই ভালো।

ডেঙ্গু জ্বরে করনীয়

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করালেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে ডেঙ্গু জনিত কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ডেঙ্গু জ্বরটা আসলে একটা গোলমেলে রোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হয়।

  • সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।
  • যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।
  • জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধই যথেষ্ট। এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ঔষধ কোনক্রমেই খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে।
  • জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।

ডাক্তারের কাছে কখন যাওয়া উচিত?

ডেঙ্গু জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই বিভিন্ন উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা ভালো। যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত সেগুলো হলো-

  1. শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকলে।
  2. রক্ত পরীক্ষায় প্লাটিলেটের মাত্রা কম পাওয়া গেলে
  3. শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
  4. পেটে পানি এসে ফুলে গেলে।
  5. প্রস্রাবের মাত্রা কমে গেলে।
  6. শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে।
  7. দেহে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্লান্তিভাব বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
  8. পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হলে কিংবা বমি হলে।

সর্বশেষ কথা

আশা করি আমাদের পোষ্ট থেকে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ ভাবে জানতে পেরেছেন। পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় তাহলে অবশ্যই আপনার কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং আপনাদের যদি ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাবেন।

আরও দেখুনঃ 

দৌড়ানোর উপকারিতা – জানুন কতক্ষণ দৌড়ানো উচিত?

হস্ত মৈথুনের উপকারিতা ও অপকারিতা

মধু খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা ও অপকারিতা

খুশকি দূর করার উপায় – দেখুন বিস্তারিত

দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা – দেখুন বিস্তারিত

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top