বরইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা

বরই এর উপকারিতা ও অপকারিতা – বরই ফলের যত গুনাগুন এখান থেকে জেনে নিন

বরই আকারে ছোট। দেশীয় এই ফলটির অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। টক মিষ্টি এই ফলটি সকলের চাহিদার মধ্যেই রয়েছে। কাঁচা বরই খেতে অনেকেই পছন্দ করে। অনেকেই কাঁচা বরই লবণ ও মরিচের গুঁড়া দিয়ে ভর্তা বানিয়ে খেতে পছন্দ করে। এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় ও পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। বিশেষ করে কাঁচা বরই ছোটদের কাছে প্রিয়। কাঁচা বরই ভর্তা বানিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি আচার বানিয়ে খাওয়া যায় এবং বরই শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রেখে খাওয়া যায়।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পাকা বরই পাওয়া যায়। দেশি বরইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বড়ই বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষ করে পাকা বরই অনেকের কাছেই অনেক প্রিয়। শীতকালীন এই মুখরোচক ফলটি প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়।

তবে এর গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের অজানা। সুস্বাদু এই ফলটি বিভিন্ন গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই ফলটি ওষুধী হিসেবেও কাজ করে। আজকের এই পোস্টে বরই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে।

যাদের বরই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা নেই। তারা এই পোস্ট থেকে খুব সহজেই জানতে পারবেন। আমরা এই পোস্টে বরই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে তুলে ধরেছি। যা আপনারা খুব সহজেই এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন টক মিষ্টি এই সুস্বাদু ফলটির উপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক।

বরই খাওয়ার উপকারিতা কি

বড়ই এর বিশেষ গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের শরীর সুস্থ ও সবল রাখতে অনেক সাহায্য করে। ওষুধী গুনাগুন যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে মুক্ত পাওয়া যায। আমাদের উচিত শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অন্যান্য খাবার খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় বরই রাখা।এতে করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তোলা যাবে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

বরই খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক। বরইয়ে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে তা আমাদের শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। যারা প্রতিদিন ১০০ গ্রাম বড়ই খেলো তারা ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে পারল ৭৭ শতাংশ। তাই যারা নিয়মিত বরই খেতে পারবে তারা ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

এছাড়াও বরইয়ে রয়েছে ভিটামিন এ ও বি কমপ্লেক্স। প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থেরও ভালো উৎস বরই। এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস। এই ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড় ভালো রাখে। এর পটাশিয়াম আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি এই ফলের ক্যালরির মাত্রা কম।

নিয়মিত বরই খেতে পারলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তোলার পাশাপাশি রক্ত পরিশুদ্ধি করে, লিভারের সুরক্ষা বাড়িয়ে তুলে, ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, হাড় মজবুত করে, হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, অনিদ্রা থেকে মুক্ত রাখে, এছাড়া বিভিন্ন গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনেক উপকারী। তাই বলা যায় স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বরইয়ের উপকারিতা রয়েছে অনেক। খাদ্য তালিকায় অন্যান্য ফল রাখার পাশাপাশি আমরা বরই রাখতে পারি।

বরই ফলের উপকারিতা

বরই ফলের বেশ উপকারিতা রয়েছে এর গুনাগুন সম্পর্কে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। বরই খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বরইয়ের ভূমিকা রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বরই ফলের কিছু উপকারিতা দিকগুলো যা আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। আপনি যে খাবার খাচ্ছেন সে খাবার দ্বারা উপকার হচ্ছে কিনা তা জেনে রাখা উচিত।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে– যারা নিয়মিত বরই খেতে পারলো তারা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারলো। যাদের হজম শক্তি খুবই দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে বড়ই অনেক উপকারী। বরই খাবার পরিপাকে সহায়ক এনজাইমের উপস্থিতি রয়েছে। এর ফলে খুব সহজেই হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় – শরীর সুস্থ ও শবল রাখার জন্য অবশ্যই সুস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন এর মধ্যে বরই একটি। বরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

হাড় মজবুত করে– হাড়ের গঠন মজবুত রাখার জন্য ক্যালসিয়াম এর প্রয়োজন। বয়সের সাথে সাথে দেখা যায় হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। তবে বরই হাড় মজবুত রাখার জন্য অনেকটাই কার্যকারী। এই ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আরো অনেক ভিটামিন সাথে মিনারেল। যা হাড়কে মজবুত ও শক্ত করতে সাহায্য করে।

অনিদ্রা থেকে মুক্তি– অনিদ্রা থেকে মুক্তি রাখে অনেকটাই বরই। বরই খেলে ইনসোমনিয়া এবং অনিদ্রা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর মধ্যে থাকা শক্তিশালী ক্যামিক্যাল ব্রেইনকে শান্তি প্রদান করে, যার ফলে ভালো ঘুম হয়।

লিভারের সুরক্ষায়– শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলো লিভারের ক্ষতি করে। লিভার সুরক্ষা করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বরই এর মধ্যে রয়েছে। নিয়মিত বরই খেতে পারলে লিভারের সুরক্ষা বৃদ্ধি করা যায়। বরই এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে।

রক্ত পরিশুদ্ধি– বরই মৌসুম অনুযায়ী শেষ হয়। তবে শুকনো করে অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। রক্ত পরিশুদ্ধি রাখার জন্য শুকনো বরই খাওয়া উচিত। শুকনো বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে– ‌ ক্যান্সারের প্রভাব কমানোর ক্ষেত্রে বরই এর উপকারিতা আছে। বরইয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। যা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়– হৃদরোগের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে বরইয়ের কার্যকারিতা অনেক। শরীরের প্রদাহ কমানোর জন্য প্রয়োজন ফাইটোকেমিকেল যা বড়ই রয়েছে। এর ফলে হৃদ রোগের ঝুকি কমে যায়। এবং বরই হার্ট এর অন্যান্য অসুখ হওয়ার থেকেও আমাদের রক্ষা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে- বরই ক্যালরির মাত্রা অনেক কম এর পাশাপাশি ফ্যাট এর মাত্রা নাই বললেই চলে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বড়ইয়ের ভূমিকা রয়েছে। বরইয়ে ক্যালরির মাত্রা কম থাকার ফলে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে।

রক্ত সঞ্চালন– শরীরের রক্ত সঞ্চালন রাখা প্রয়োজন। যারা নিয়মিত বরই খেতে পারবে তারা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পারবে। আয়রন ও ফসফরাস শরীরে রক্ত উৎপাদন এবং রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে।

তাই বলা যায় বরই এর ঔষধি গুনাগুন পাওয়ার জন্য অন্যান্য খাবার তালিকায় বরই রাখা উচিত। শরীরের রোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেকটাই সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে অনেক কার্যকারী।

বরই খেলে কি কাশি হয়

বরই খাওয়ার স্বাস্থ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। তবে অনেকের জানার ইচ্ছা থাকে বরই খেলে কি কাশি হয়। বড়ই স্বাস্থ্যকর ফল আমাদের শরীরের বিভিন্ন অসুখ দূর করতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন কারণে কাশি সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও শীতকালে অনেকের কাশির সমস্যা বৃদ্ধি হয়। কাশি বৃদ্ধি না করতে চাইলে এসব খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন দুধ, তরমুজ প্রক্রিয়াজাত খাবার।

এর পাশাপাশি টক জাতীয় খাবার। যেহেতু বরই টক মিষ্টি ফল যা কাশির সমস্যা সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। যাদের কাশির সমস্যা রয়েছে তারা বরই খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। টক জাতীয় অনেক ফলে সাইট্রিক এসিড থাকে। তাই টক জাতীয় ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ সাইট্রিক এসিড গলায় সংক্রমণ ঘটায় ও কফ বাড়িয়ে দেয়। তাই এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।

বরই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বরইয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। বরই স্বাস্থ্যকর ফল, বরই আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিনের অভাব ও ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে অনেক কার্যকরী। বরইয়ে উপকারিতার পাশাপাশি অনেকেই জানতে চায় এর অপকারিতা। অপকারিতা বলতে নাই বলাই চলে তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যা এখন আমরা আলোচনা করব।

বরই স্বাস্থ্যকর ফল তবে এটি টক হয়। টক জাতীয় ফল খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। সকালে নাস্তা করে নেয়ার পর বরই খাওয়া উচিত। এতে করে বরই গুনাগুন গুলো শরীরে উপকারে আসবে।

বরই ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকার কারণে ওজন বৃদ্ধি হয় না। যারা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বরই খাওয়া যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রিত মত খাওয়া যেতে পারে।

এছারাও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত যেমন। শুকনো বরই কিনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সেগুলো যাচাই করে কেনা উচিত। কেননা অনেকেই ব্যবসায় লাভ করার ক্ষেত্রে নানান ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বড়ই শুকনো করে থাকে। যা আমাদের শরীরে এর প্রভাব পড়তে পারে। যেমন পেটে ব্যথা সমস্যা হতে পারে। তাই বড়ই কেনার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।

বরই ছবি

অনেকেই বরয়ের ছবি সংগ্রহ করতে চায়। আমরা এই পোস্টে আপনাদের জন্য বরয়ের ছবি তুলে ধরেছি আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজেই বরয়ের ছবি সংগ্রহ করতে পারবেন।
বরই ছবি

শেষ কথা

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে বরই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরার। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজে জানতে পেরেছেন বরই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো। যদি আজকের এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখতে পারেন। আমাদের ওয়েব সাইটে স্বাস্থ্য বিষয়ে আরো বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে যেগুল পড়লে আপনাদের উপকারে আসতে পারে।

আরও দেখুনঃ

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কমলা খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাল্টার উপকারিতা ও অপকারিতা – জেনে নিন মালটার যত গুনাগুন

জলপাইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা – এখান থেকে জেনে নিন খুব সহজেই

ব্যায়াম করার নিয়ম – দেখুন ঘরে ব্যায়াম করার নিয়ম

কাজু বাদামের উপকারিতা – দেখুন বিস্তারিত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top