জলপাইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা

জলপাইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা – এখান থেকে জেনে নিন খুব সহজেই

জলপাই টক জাতীয় ফল, জলপাইয়ের আচার অনেক জনপ্রিয়। জলপাইয়ের আচার খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তোলে। শীতকালীন এই ফলটি অনেকের কাছেই প্রিয়, বিশেষ করে এর আচার। তবে কাঁচা জলপাইয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর সাথে আচারের উপকার রয়েছে যেগুলো অনেকেরই অজানা। জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা আজকের এই পোস্টে তুলে ধরব।

জলপাই একটি পুষ্টিকর ফল যা আমাদের শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। পেটে সমস্যা, বদ-হজম দূর করার পাশাপাশি ঔষধি হিসেবেও কাজ করে। আমরা আজকের এই পোস্টে জলপাই এর কিছু উপকারিতা দিক ও অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরব।

আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে আজকের এই পোস্টে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজেই জলপাইয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

জলপাই ফলের উপকারিতা

জলপাইয়ের পুষ্টি গুণ পাওয়ার জন্য জলপাই খাওয়া জরুরী। প্রতিদিন জলপাই খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। তাই নিয়মিত জলপাই খেতে পারলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করা যাবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যাবে।

এছাড়াও জলপাই ফল ওষুধ হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন অসুখ সারাতে কাজ করে। যেমন- পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদন্ত্র ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এই ফল।

এর পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুলের গোড়া মজবুত করে, হাড়ের ক্ষয় রোধ প্রতিরোধ করে, পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে, চোখে যত্নে এই ফলটির উপকারিতা রয়েছে, পিত্তথলিতে পাথর জমতে বাধা দেয়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে, সর্দি, জ্বর থেকেও দূরে রাখে।

প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে: খাদ্যশক্তি- ১৪৬ কিলোক্যালরি, শকরা-৩.৮৪ গ্রাম, চিনি-০.৫৪ গ্রাম, খাদ্য আঁশ- ৩.৩ গ্রাম, চর্বি-১৫.৩২ গ্রাম, আমিষ-১.০৩ গ্রাম, ভিটামিন এ- ২০ আইইউ, বিটা ক্যারোটিন-২৩১ আইইউ, থায়ামিন-০.০২১, রিবোফ্লাবিন-০.০০৭ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন-০.২৩৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬-০.০৩১ মিলিগ্রাম,

ফোলেট-৩ আইইউ, ভিটামিন ই-৩.৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে-১.৪ আইইউ, ক্যালসিয়াম-৫২ মিলিগ্রাম, আয়রন-৩.১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম-১১মিলিগ্রাম, ফসফরাস-৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম। তাই বলা যায় শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন জলপাই খাওয়া উচিত। এতে করে শরীর সুস্থ ও সবল রাখা যাবে। তাই খাবার তালিকা এই ফলটি রাখা উচিত।

জলপাই খাওয়ার উপকারিতা

আমরা জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে উপর থেকে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি‌। জলপাই খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে যা আমরা এখন তুলে ধরবো। জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের সুস্থ ও সবল রাখতে অনেক কার্যকারী। জলপাই ঔষধি হিসেবে কাজ করে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক জলপাই খাওয়ার উপকারিতা।

ওজন কমায়– যারা কিনা ওজন বৃদ্ধি হওয়ার কারণে নানা ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে। তাদের ক্ষেত্রে জলপাই অনেক কার্যকরী। স্যাচুরেটেড ফ্যাট অন্য খাবারে বিদ্যমান স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বদলে গ্রহণ করা হয় তখন তা দেহের ভেতরের ফ্যাট সেলকে ভাঙতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের তেলেও রয়েছে লো কোলেস্টেরল যা ওজন এবং ব্লাডপ্রেশার কমাতে সহায়ক।

চোখের যত্নে– চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ভিটামিন এ এর প্রয়োজন হয় যা জলপাইয়ে রয়েছে। ভিটামিন এ অভাবে রাতকানা রোগ হয়। যাদের ভিটামিন এ অভাব রয়েছে তা ঘাটতি পূরণ করার জন্য জলপাইয়ের অনেক ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত জলপাই খেতে পারলে ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করা যায়। এছাড়া জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করে এটি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে– যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা রয়েছে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ লাখবে জলপাই। জলপাই রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পিত্তথলিতে পাথর জমতে বাধা দেয়– নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিকভাবে কাজ করে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই বলা যায় নিয়মিত জলপাই খাওয়া উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়– জলপাই খাদ্য তালিকা রাখতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা যায়। জলপাই প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। সর্দি, জ্বর ইত্যাদি দূরে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

এলার্জির প্রতিরোধ– যাদের পূর্বে থেকে এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে জলপাই অনেক উপকারী একটি ফল। জলপাই এলার্জি প্রতিরোধ করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ত্বক ও চুলের যত্নে– জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের সুস্থ রাখার পাশাপাশি ত্বকের ও চুলে যত্নে অনেক কার্যকারী। জলপাইয়ের তেল চুলের গোড়ায় লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয়। এতে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়। এবং জলপাইয়ের ভিটামিন-ই ত্বকে মসৃণ ভাব আনে। এ ছাড়া ত্বকের ক্যানসারের হাত থেকেও বাঁচায় জলপাই। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা রোধ করে জলপাই।

পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে– অনেকেরই গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা রয়েছে এই সমস্যা অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে জলপাই। নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কম হয়। বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে হয়।

হৃদ্যন্ত্রের যত্নে– যখন কোনো মানুষের রক্তে ক্ষতিকর মুক্ত কণিকা (ফ্রি র্যা ডিকেল) ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। জলপাইয়ের তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। জলপাইয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে কমে যায় হৃদ্রোগের ঝুঁকি। তাই নিয়মিত জলপাই খাওয়া উচিত।

লোহার ঘাটতি মেটায়– কালো জলপাই লৌহের বড় উৎস। রক্তের লোহিত কণিকা অক্সিজেন পরিবহন করে। কিন্তু শরীরে লৌহের অভাব হলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। ফলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। লৌহ শরীরের এনজাইম চাঙা রাখে। শরীরে লৌহের অভাব দূর করার ক্ষেত্রে জলপাইয়ের ভূমিকা অনেক।

ক্যানসার প্রতিরোধে– কালো জলপাই ভিটামিন-ই–এর বড় উৎস। যা ফ্রি র্যা ডিকেল ধ্বংস করে। ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। জলপাইয়ের ভিটামিন-ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। তাই বলা যায় জলপাইয়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই জলপাই খাওয়া উচিত।

এছাড়াও সর্দি-কাশিতে জলপাইয়ের তেলের ব্যবহার মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই অনেকেই এ মুখরোচক ফলটি ভর্তা কিংবা নানা পদের আচারে রূপান্তর করে সারা বছর সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এতে করে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ফলটি রাখতে পারবেন। আশা করা যায় এখান থেকে খুব সহজেই এর উপকারিতা দিকগুলো জানতে পেরেছেন।

জলপাই আচার এর উপকারিতা

আচার খেতে পছন্দ করে, কিন্তু জলপাইয়ের আচার ক্ষেত্রে পছন্দ করেনা এরকম মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। জলপাই আচার অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে জলপাইয়ের আচার বিভিন্ন খাবারের সাথেও খাওয়া যায়। জলপাই অনেক টক তবে এর আচার অনেক সুস্বাদু হয়। জলপাই আচার অনেক গুনাগুন রয়েছে। এই গুনাগুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যারা আচার খেতে পছন্দ করেন তারা জলপাইয়ের আচার খাদ্য তালিকা রাখতে পারেন।

সাধারণত জলপাই আচার হিসেবেই বেশি খাওয়া হয়। তবে জলপাইয়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য কাঁচা জলপাই খাওয়াই বেশি ভালো। ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ থাকে কারন জলপাই এর খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এই আঁশ নিয়মিত খাবার হজমে সাহায্য করে। পাশাপাশি পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত, কোলনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

জলপাই খাওয়ার নিয়ম

জলপাইয়ের গুনাগুনের জন্য আমাদের অবশ্যই জলপাই খাওয়া উচিত। জলপাই শীতকালীন ফল, এই ফলটির স্বাদ টক, তবে এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং পেকে গেলেও খাওয়া যায়। এর পাশাপাশি ভর্তা করে, আচার বানিয়ে এবং রান্না করেও খাওয়া যায়।

তবে জলপাইয়ের আচার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সকালের নাস্তা খেয়ে নিতে হবে। তা না হলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এই ফলটি প্রচুর উপকারিতা রয়েছে, তাই শরীর স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে জলপাইয়ের আচার খাওয়া বা জলপাই রান্না করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এছাড়াও জলপাই ঔষধি হিসেবেও কাজ করে

জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় এটি রাখা যায়। তাই বলা যায় জলপাইয়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য এই ফলটি আমাদের খাওয়া উচিত।

জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জলপাইয়ের গুনাগুন আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। জলপাই একটি উপকারী ফল যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এলার্জি জ্বর সর্দি-কাশি থেকেও দূরে রাখে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। জলপাইয়ের উপকারিতা পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই এই ফলটির খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

তবে অনেকেই এর অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চায়, অপকারিতা বলতে তেমন নেই। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের ক্ষেত্রে জলপাইয়ের অপকারিতা দিক বলা যায়। যারা ওজন বাড়াতে চায় তাদের ক্ষেত্রে জলপাই বেশি না খাওয়াই ভালো অতিরিক্ত জলপাই খেলে শরীরের ওজন কমে যাবে।

তাই যারা ওজন কমাতে চায় না তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জল পাই না খাওয়াই ভালো। এছাড়াও অনেকেই আচার খেতে পছন্দ করে তবে অতিরিক্ত আচার খাওয়া ভালো নয়। এর সাথে খালি পেটে খাওয়া মোটেও ঠিক নয়, তাই এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।

জলপাই ফলের ছবি

অনেকেই অনুসন্ধান করে থাকেন জলপাই ফলের ছবি। আমরা এই পোস্টে জলপাই ফলের ছবি তুলে ধরেছি। আশা করি আজকের এই পোস্টে থাকা জলপাই ফলের ছবিটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

জলপাই ফলের ছবি

শেষ কথা

আমরা চেষ্টা করেছি আজকের এই পোস্টে জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরার। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজে জানতে পেরেছেন জলপাই এর উপকারিতা ও অপকারিতা। যদি আজকের এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখতে পারেন। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে যেগুলো পড়লে আপনাদের উপকারে আসতে পারে।

আরও দেখুনঃ

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কমলা খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

এলোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যায়াম করার নিয়ম – দেখুন ঘরে ব্যায়াম করার নিয়ম

পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আঙ্গুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top