পেঁয়াজ সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। রান্নার সাদ বাড়িয়ে তুলে দ্বিগুণ। তবে এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা যে খাবার খাচ্ছি সে খাবারের কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে তা জানা অবশ্যই জরুরী। কাদের পেঁয়াজ খাওয়া উচিত নয় বা কোন সমস্যা কারণে খাওয়া যাবেনা, জানার জন্য পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন। আশা করা যায় এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি পেঁয়াজের গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারবেন। এবং এর সাথে আরও জানতে পারবেন পেঁয়াজের কিছু উপকারিতা দিক।
যারা ভেবে থাকে পেঁয়াজ শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় এটি তাদের ভুল ধারণা। পেঁয়াজ শরীরের বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঠান্ডা সারানোর ক্ষেত্রে অনেক কার্যকারী। তাই বলা যায় পেঁয়াজের এই গুনাগুন গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক ভালো। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে পেঁয়াজ শরীরে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান একাধিক রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই চলুন পেঁয়াজের উপকারিতা দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক। পেঁয়াজের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে নিচ থেকে সংগ্রহ করে নিন
পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ
পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ গুনগুলো আমরা অনেকেই জানিনা, যা সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন। পেঁয়াজ আমাদের শরীরের জন্য কতটা কার্যকারী তা জানলে অবাক হবেন। তাহলে চলুন পেঁয়াজের পুষ্টিগুণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
পেঁয়াজের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার যা ইমিউনিটি বাড়ায়, হাড় শক্ত করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পেশীর গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া পেঁয়াজের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি, বি নাইন, বি সিক্স মেটাবলিজম বাড়ায়। পাশাপাশি শরীরে লোহিত র*ক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
- পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে– বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে বা রান্না করার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কোন ভাবে পুড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজের ভূমিকা রয়েছে অনেক। ক্ষতস্থানে এক টুকরো পিঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন। অল্প সময়েই দেখবেন জ্বালা ভাব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতও সেরে গেছে। তাই বলা যায় ক্ষতস্থানে উপশম পাওয়ার জন্য পেঁয়াজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- জ্বরের কার্যকারিতায় পেঁয়াজ– সাধারণত ছোট বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন খেয়ে থাকি। তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলেই দেখা যায় ছোটখাটো অসুখ খুব সহজেই দূর করা যায়। জ্বরের ক্ষেত্রে যদি পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও উপশম পাওয়া যায়। রাতে শুতে যাওয়ার আগে একটা পিঁয়াজ কেটে নিন। তার সঙ্গে অল্প করে আলু এবং দুটি রসুনের কোয়া মিশিয়ে মোজার মধ্যে রেখে সেই মোজা পরে শুয়ে পড়ুন। এমনটা কয়েকদিন করলেই দেখবেন সুস্থ হতে শুরু করেছেন।
- র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে- গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ১৬২ মিলিগ্রাম পেঁয়াজ খেলে র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় প্রাকৃতিক ওষুধের কাজ করে পেঁয়াজ।
- ডায়াবেটিস দূর করার জন্য– অনেকেরই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন খেয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন মেডিসিন যেমন শরীরের অসুখ সারানোর কাজ করে এর পাশাপাশি অপকার করে। তবে এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস সারানোর ক্ষেত্রে পেঁয়াজের ভূমিকা রয়েছে। পেঁয়াজে উপস্থিত উপাদান যার র*ক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের ঘাটতি যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগই থাকে না।
- আঁচিল দূর করার জন্য– অনেকের আঁচিল দূর করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে অনেকেই কার্যকারিতা দেখতে পায় অনেকে দেখতে পায় না। তবে এক্ষেত্রে পেঁয়াজ ব্যবহারের মাধ্যমে আঁচিল দূর করা যায়। প্রতিদিন শুয়ে পড়ার আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। গোল করে পেঁয়াজ কেটে আঁচিলের উপর রেখে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিন। যাতে সেটি পরে না যায়।
- মুখের বদ গন্ধ দূর করে– পেঁয়াজে এক ধরনের গন্ধ রয়েছে। যার কারণে অনেকে পেঁয়াজ খেতে পছন্দ করে না। তবে এই পেঁয়াজ মুখের বদ গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখ গহ্বরের উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলি মরতে শুরু করে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। সেই সঙ্গে মাড়িতে নানাবিধ রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
- হজম শক্তি বাড়ায়– যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে পেঁয়াজের ভূমিকা রয়েছে। যারা নিয়মিত খেতে পারবে তাদের জন্য হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা ফাইবার এবং প্রিবায়োটিক্স হজম শক্তি বাড়ায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপকরণ দেহের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
- স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়– স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া যেতে পারে। স্মৃতিশক্তির দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে পেঁয়াজ অনেক উপকারী। তাই বলা যায় স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়া যেতে পারে। নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তির যেমন উন্নতি ঘটে, তেমনি নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একাধিক ব্রেন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
- কাশি দূর করে– কাশি দূর করার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের উপকারিতা অনেক। একটা পেঁয়াজকে কেটে নিয়ে তার রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর তাতে কয়েক ড্রপ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রন দিনে কম করে দুবার পান করলেই কাশি কমে যেতে শুরু করবে।
- র*ক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ রাখে– র*ক্ত চলাচল ঠিক রাখার জন্য পিয়াজ খাওয়া যেতে পারে। কারণ নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে র*ক্ত চলাচল ঠিক থাকে। এর ফলে হার্টের অসুখের সম্ভাবনাও অনেকটা কমে যায়।
- চুল পড়া বন্ধ করে– নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়া হ্রাস করে ও চুল বৃদ্ধি করে। পেঁয়াজের রয়েছে প্রচুর সালফার, যা চুল পড়া রোধ করে। বিশেষ করে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে এবং প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
এর সাথে ঠান্ডা জ্বর সর্দি ও এলার্জি সারানোর ক্ষেত্রে পেঁয়াজের উপকারিতা অনেক পেঁয়াজের রসের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। তাই বলা যায় প্রিয়া শুধু রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় না ওষুধের হিসেবেও কাজ করে।
পেঁয়াজ খেলে কি গ্যাস হয়
অধিকাংশ মানুষেরই গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। গ্যাসের সমস্যার কারণে পেটের যন্ত্রণা হয়। এই কারণে অনেকেই গ্যাসের সমস্যার সমাধান করার জন্য নানান ধরনের মেডিসিন সেবন করে থাকে।
তবে এর মাঝে অনেকে জানতে চায় পেঁয়াজ খেলে কি গ্যাস হয়। রান্নার করে খাওয়ার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের কোন সমস্যা নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় কাঁচা পেঁয়াজ খেলে গ্যাসের সমস্যা তৈরি হয়। কারণ পেঁয়াজে থাকা ফ্রুকটোজ যা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আন্ত্রিক গ্যাসের উৎস হতে পারে। পেঁয়াজ সংশ্লিষ্ট গ্যাসের লক্ষণ হিসেবে পেট ফেঁপে যেতে পারে, পেটে অস্বস্তি হতে পারে, ঘনঘন বাতকর্ম হতে পারে ও মুখ থেকে দুর্গন্ধময় শ্বাস বের হতে পারে।
পেঁয়াজ খেলে কি ওজন কমে
শুনতে আশ্চর্য লাগলে এটাও সত্যি যে পেঁয়াজ ওজন কমাতে সাহায্য করে। বেড়ে যাওয়া অতিরিক্ত মেদের কারণে অনেকে খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে থাকে। তবে আপনি যদি মেদ কমাতে চান তাহলে পেঁয়াজ নিয়মিত খেতে পারেন। নিয়মিত পেয়াজ খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে পারবেন।
ওজন কমানোর জন্য পেঁয়াজের উপকারিতা অনেক। পেঁয়াজে রয়েছে ফাইবার ও ক্যালোরির মাত্রা কম যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজ খেলেও অতিরিক্ত ফাইবার খাওয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। এক কাপ পেঁয়াজে মাত্র ৬৪ ক্যালোরি। ফলে ওজন ঝরানোর যাত্রায় পেঁয়াজের চেয়ে ভালো খাদ্য কমই হয়। পেঁয়াজে কোয়াসেটিন নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদান ওজন কমানোর ক্ষমতা রাখে
পেঁয়াজের উপকারিতা ও অপকারিতা
পেঁয়াজের যেমন উপকারিতা দিক রয়েছে, তেমনি অপকারিতা দিকগুলো রয়েছে। পেঁয়াজ ঔষধি হিসেবে কাজ করে, তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পেঁয়াজ খাওয়ার পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক পেঁয়াজ খাওয়ার কিছু অপকারিতা দিকগুলো।
এলার্জি জনিত সমস্যা তৈরি করে– যাদের কিনা পূর্বে থেকেই এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে পেঁয়াজ খাওয়ার সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। পেঁয়াজ অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য খাওয়াটা মোটেই নিরাপদ নয়। পেঁয়াজের কারণে যদি অ্যালার্জি হয়, তহলে পেয়াজ খেলে ত্বক এবং চোখে লালভাব, ত্বকের চুলকানি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, শরীর জ্বলন এর মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
চোখের সমস্যা হতে পারে- রান্না করার সময় পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়। পেঁয়াজ কাটার সময় পেঁয়াজের ঝাঁজালো রস বেশিরভাগ সময় চোখে লেগে যায়। এর ফলে চোখে পানি ঝরে, পেঁয়াজের রয়েছে সালফিউরিক এসিড। এই সালফিউরিক এসিড চোখের সংস্পর্শে গেলে চোখ জ্বলাপোড়াসহ মানুষকে অন্ধও করে দিতে পারে।
পেঁয়াজ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
পেঁয়াজ খাওয়ার আরো বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এগুলো অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আরো কিছু ক্ষতিকর দিক
- মুখে দুর্গন্ধ– কাঁচা পেঁয়াজে এক ধরনের গন্ধ রয়েছে যা অতিরিক্ত খাওয়ার পরে মুখ দিয়ে গন্ধ করে। কাঁচা পেঁয়াজে আপনার মুখ ও শ্বাসকে দীর্ঘসময় ধরে দুর্গন্ধযুক্ত রাখতে পারে।
- অন্ত্রের গ্যাস– অতিরিক্ত পেঁয়াজ খাওয়ার ফলে অন্ত্রের গ্যাস হতে পারে এবং সেই সাথে পেট ব্যথা হতে পারে। মূলত পেঁয়াজে ফ্রুকটোজের মতো প্রাকৃতিক শর্করার উপস্থিতির কারণে এটা হয়।তবে কম পরিমাণে, এটি কোনো হুমকি নয়। যদি খুব বেশি পেঁয়াজ গ্রহণ করেন তবে অন্ত্রের গ্যাসের মাত্রা বাড়তে পারে। এটি হজমজনিত সমস্যা- যথা; পেটে ফুলে যাওয়া, অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কখনো কখনো বমি বমি ভাব ও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
পেঁয়াজ খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক আশা করা যায়। আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজে জানতে পেরেছেন
শেষ কথা
আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি খুব সহজে জানতে পেরেছেন, পেঁয়াজ খাওয়ার উপকারিতা দিকগুলো ও অপকারিতা দিকগুলো। যদি আজকের এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে। তাহলে আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও আমাদের এই ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ে আপনাদের উপকারে আসতে পারে।
আরও দেখুনঃ