লটকন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

লটকন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – লটকন সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন

লটকন ফল বিভিন্ন নামে পরিচিত। এই ফলের রং অনেকটাই হলুদ এবং দেখতে গোলাকার ও ছোট আকারের। এটি ফলটি রসালো, এটির স্বাদ একটু টক হয় ও সাথে মিষ্টি। এতে দেখতেও যেমন সুন্দর খেতেও অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ তো রয়েছেই। লটকন বিভিন্ন ঔষধি হিসেবেও কাজ করে। এর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য অনেক কার্যকারিতা রয়েছে।

লটকন সাধারণত বর্ষায় পাওয়া যায়। এবং এটির বাজারে কিছু দিনের জন্য পাওয়া যায়। লটকনের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। যা আজকের এই পোস্টে তুলে ধরবো লটকনের উপকারিতা সকলেরই জেনে রাখা উচিত।

আজকের এই পোস্টে আপনাদের বোঝানোর সুবিধার্থে কয়েকটি বিষয়ে বিভক্ত করে লটকনের উপকারিতা ও অপকারিতা তুলে ধরবো। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকেই আপনি খুব সহজেই লোটকলের উপকারিতা ও অপকারিতা দিকগুলো জেনে নিতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক লটকনের উপকারিতা দিকগুলো।

লটকনের পুষ্টিগুণ

লটকনের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা যা আমরা এই পোস্টে তুলে ধরবো। লটকনের বেশ কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অসুখ সারাতে অনেক কার্যকারী। তাহলে চলুন লটকনের পুষ্টির কোন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

লটকনে আছে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের ভিটামিন ‘বি’। এতে ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২ আছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ০৪ মিলিগ্রাম এবং ০.২০ মিলিগ্রাম। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে ৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্রোমিয়াম থাকে। পাকা লটকন খাদ্যমানের দিক দিয়ে খুবই সমৃদ্ধ। এই ফলে চর্বি কম থাকায় ও কোন শর্করা নেই বিধায় সকল বয়সের মানুষ নিশ্চিন্তে খেতে পারে।

লটকন ফলের উপকারিতা কি

লটকন একটি স্বাস্থ্যকর ফল, শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই ফলের বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে যা ঔষধি হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরীর সুস্থ ও ভালো রাখার জন্য ক্যালসিয়াম ভিটামিনের প্রয়োজন যা এই ফলের বিদ্যমান রয়েছে। লটকন ফলের উপকারিতা কি কি তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

লটকনে ভিটামিন সি রয়েছে এর ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, দাঁত ও হার মজবুত করে।শারীরিক দূর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পায়ে ব্যথা, ঠোঁট এবং পায়ের তালু ফাটা, ঠোঁট ও মুখের ঘা এবং বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় দূর করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, বমি ভাব দূর করে,মানসিক অবসাদ দূর করে,রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

লটকন খাওয়ার উপকারিতা

লটকন খাওয়ার বেশ উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। লটকন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর সুস্থ ও সবল রাখতে অনেকটাই কার্যকারী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক লটকন খাওয়ার উপকারিতা।

ক্যান্সারের ঝুকি কমায়– ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে লটকনে। গবেষকরা বলছেন এসব উপাদান মানবদেহে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

ওজন কমায়– যাদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে লটকন উপকারী ফল। লটকন মেদ কমাতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা লটকন খেতে পারেন। লটকন ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ– এই ফলটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কার্যকারী একটি ফল। ডায়াবেটিসের কারণে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফল খেতে পারেনা। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা এই ফলটি খেতে পারবে। এ ফলে ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বেশ উপকারী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়– লটকন প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে খেলে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হয়। লটকন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এতে থাকা ভিটামিন সি যা শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন অসুখ থেকে দূরে রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম লটকনে রয়েছে ১.৪২ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৪৫ গ্রাম ফ্যাট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

অধিক পরিমাণে ক্যালরি– লটকনে অধিক পরিমাণে ১০০ গ্রাম লটকনে ক্যালরির পরিমাণ ৯২। যেখানে ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ক্যালরি পাওয়া যায় ৪৬। তাই নিয়মিত লটকন খাওয়ার ফলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে– লটকনের প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে যা অ্যানিমিয়া রোগ থেকে দূরে রাখে। অ্যানিমিয়া রোগ মূলত আয়রনের স্বল্পতার কারণে হয়। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য লটকনের ভূমিকা রয়েছে অনেক। তাই নিয়মিত লটকন খেতে পারলে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

চোখ লাল হওয়া থেকে বাঁচায়– বিভিন্ন কারণে চোখ লাল হয় তবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় লটকন খাওয়ার মাধ্যমে। চোখ লাল হওয়া থেকে শুরু করে চুলকানি সারাতেও অনেক কার্যকারী।

ভিটামিন বি সমৃদ্ধ ফল- ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল লটকন। লটকনে ভিটামিন বি-১ এর পরিমাণ হল ১০.০৪ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন বি-২ আছে ০.২০ মিলিগ্রাম। বেরিবেরি রোগ থেকে দূরে রাখে লটকন। শারীরিক দূর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পায়ে ব্যথা, ঠোঁট এবং পায়ের তালু ফাটা, ঠোঁট ও মুখের ঘা এবং বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় দূর করে।

এছাড়াও রয়েছে নানা রকম পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রুচি বাড়াতে লটকন বেশ উপকারী। গরমে তৃষ্ণা মিটাতেও সক্ষম লটকন। কারণ এতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি।

লটকন খাওয়ার নিয়ম

লটকন আকারে ছোট উপরের খোসা তুলে ফেলে লটকনের ভেতরে থাকা অংশটি খাওয়া হয় যা আকারে অনেক ছোট। লটকন ফলকে সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম তৈরি করেও খাওয়া যায়। কিছু লটকন বেশ মিষ্টি আবার কিছু লোটকল কিছু টক হয়। এর মাঝে মিষ্টি লটকনের চাহিদা বেশি রয়েছে।

লটকন বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, হাড়ফাটা, ডুবি, বুবি নামেও পরিচিত। বিভিন্ন ফল খাওয়ার পাশাপাশি লটকন রাখতে পারেন কারণ লটকনের পুষ্টিগুণ অনেক রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে।

লটকন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

লটকন ফলের উপকারিতা অনেক লটকন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। লটকন ফল খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এর উপকারিতা অনেক। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অসুখ সারাতেও এর কার্যকারিতা রয়েছে যা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি। আমাদের খাদ্য তালিকায় লটকন রাখা যেতে পারে।

লটকনের পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। শরীরের ভিটামিনের অভাব দূর করে তাই লটকনের এই উপকারিতা দিকগুলো পাওয়ার জন্য অবশ্যই নিয়মিত লটকন খেতে হবে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে লটকন খেতে পারলে শরীরের জন্য অনেক ভালো।

অনেকের জানার ইচ্ছা থাকে লটকন খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা দিকগুলো কি। লটকনের ক্ষতিকর দিক নেই লটকন একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার যা সকলের জন্যই ভালো। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে আপনারা খুব সহজেই নটকনের উপকারিতা দিকগুলো জানতে পেরেছেন।

লটকন ফলের ছবি

অনেকেই লটকন ফলের ছবি সংগ্রহ করতে চায়। তাই আমরা এই পোস্টে লটকন ফলের ছবি তুলে ধরেছি। আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে খুব সহজেই লটকন ফলের ছবি সংগ্রহ করতে পারবেন।

শেষ কথা

আশা করা যায় আজকের এই পোস্ট থেকে খুব সহজেই লটকনের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি আজকের এই পোস্ট আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে তারাও এ বিষয়ে জানতে পারবে। এবং আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখতে পারেন। স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল রয়েছে আপনাদের উপকারে আসতে পারে।

আরও দেখুনঃ

তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কমলা খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন

কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- এই বিষয়গুলো জেনে রাখুন

দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আপেল খাওয়ার ক্ষেত্রে যা জানা দরকার

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top