মুহররম ও আশুরার ফজিলত

মুহররম ও আশুরার ফজিলত – জেনে নিন রোজার ফজিলত

আজকে আমরা কথা বলবো মহররম ও আশুরার ফজিলত নিয়ে। আপনারা অনেকেই আছেন যারা মহররম মাস আসলে আশুরার ফজিলত জানার জন্য ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেন। আপনাদের সবার সুবিধার্থে আজকের এই পোস্টে মহররম ও আশুরার ফজিলত নিয়ে ইসলামিক হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে। মহররম ও আশুরার ফজিলত একজন মুসলমানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা আপনি যদি একজন মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আজকের এই পোষ্ট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরবেন। নিচে থেকে জেনে নিন আশুরার রোজার ফজিলত।

মুহররম ও আশুরার ফজিলত

আমাদের আজকের এই পোষ্ট মহররম ও আশুরার ফজিলত নিয়ে সকল আলোচনা করেছে। আপনি যদি মহররম ও আশুরার ফজিলত না জেনে থাকেন। তাহলে আজকে আমাদের এই পোস্ট থেকে জেনে নিন মহররম ও আশুরার ফজিলত। মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস । এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন জুলুম করো না।” [সূরা তাওবা:৩৬]

সাহাবি আবু বাকরাহ (রা.) নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী বলেন: “বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব।” [বোখারি:২৯৫৮]

মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত। আল্লাহর বাণী “তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না।” অর্থাৎ, এই সম্মানিত মাস সমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এই বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ো না। অত:পর তাহতে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। তাদেরকে মহা সম্মানে সম্মানিত করেছেন। এসবের মাঝে সংঘটিত অপরাধকে অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আর তাতে সম্পাদিত নেক আমলকে বেশি সাওয়াব যোগ্য নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।

“কাতাদাহ (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যদিও জুলম সব সময়ের জন্য বড় অন্যায় তবে হারাম মাস চতুষ্টয়ে সম্পাদিত জুলুম অন্যান্য সময়ে সম্পাদিত জুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে আরও বেশি মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তাআলা নিজ ইচ্ছা মাফিক যাকে ইচ্ছা বড় করতে পারেন।

তিনি বলেন, মহান আল্লাহ নিজ সৃষ্টি হতে খাঁটি ও উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেছেন; ফেরেশতাকুল হতে কতককে রাসূল হিসাবে বাছাই করেছেন অনুরূপ মানুষ থেকেও। কথা হতে বাছাই করেছেন তাঁর জিকিরকে। আর জমিন হতে বাছাই করেছেন মসজিদ সমূহকে। মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রমজান ও সম্মানিত মাস চতুষ্টয়কে।

দিনসমূহ হতে বাছাই করেছেন জুমুআর দিনকে আর রাত্রসমূহ থেকে লাইলাতুল কদরকে। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন তোমরা তাদের সম্মান প্রদর্শন কর। আর বুদ্ধিমান লোকদের মতে, প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত: সেসব জিনিসের মাধ্যমেই যেসব দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।

{সার সংক্ষেপ, তাফসির ইবন কাসির, সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬}”

আশুরার ফজিলত

অনেকেই জানেননা আশুরার এই দিনটিতে আসলে কি হয়েছিল। আপনারা যাতে সঠিকভাবে আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেন। তার জন্য আজকের এই পোস্ট এ আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাই দেখে নিন আশুরার ফজিলত ও তাৎপর্য সমূহ।

আল্লাহর গণনায় মাস ১২টি। এ ১২টি মাসের মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত ও মর্যাদাবান। মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। আল্লাহ তাআলা নিজে এ মাসের নামকরণ করেন ‘মহররম’। আরবরা এ মাসকে ‘সফরুল আউয়াল’ তথা প্রথম সফর নামকরণ করে নিজেদের ইচ্ছা মতো যুদ্ধ-বিগ্রহসহ বিভিন্ন কাজকে হালাল ও হারাম করতো। অবশেষে আল্লাহ তাআলা এ অবস্থাকে নিষিদ্ধ করে এ মাসের ইসলামি নামকরণ করেন ‘শাহরুল্লাহিল মুহাররাম’ তথা মহররম আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা করেন।

এ মাসের ১০ তারিখকেই আশুরা বলা হয়। নিঃসন্দেহে আশুরার দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহকে পৃথিবীর বিভিন্ন ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এক কথায় এ দিনটি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় হিজরত এবং হক হক তথা উত্তম প্রতিষ্ঠার জন্য এক সুমহান দিন। এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ এ দিনটিকে বিশেষ ইবাদাত-বন্দেগি তথা রোজা পালনের দিন হিসেবে শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে।

এ দিনটিতে ইবাদাত বন্দেগির ফজিলত ও তাৎপর্য অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে এ দিনে মহান সফলতা দান করেছেন।

মহরম মাসের করণীয়

মহরম মাসে কি করতে হবে তা অনেকেই জানতে চান। মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতে বলা হয়েছে। আপনারা যাতে মহররম মাসের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। তার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে করণীয়সমূহ।

প্রথমত, করণীয়র মধ্যে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের রোজার পরে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা।’ তাই মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার ব্যাপারে আল্লাহর নবী (সা.) অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, কোরআনে কারিমের মধ্যে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আরবি ১২ মসের মধ্যে চারটি মাসকে আল্লাহতায়ালা হারাম ঘোষণা করেছেন।’

এই হারামের দুইটি অর্থ আছে। একটি অর্থ হলো পবিত্র। তাই এই মাসের পবিত্রতা হচ্ছে, এই মাসে কোনো ধরনের অশ্লীল, খারাপ, নিকৃষ্ট, নিষিদ্ধ কাজ না করা।

আরেকটি অর্থ হচ্ছে নিষিদ্ধ। এই মাসে যুদ্ধ, বিগ্রহ, মানুষের সঙ্গে হানাহানি এবং মানুষকে হত্যা করা অন্যান্য মাসের চাইতে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। সুতরাং, এই দিক থেকে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মাসের যে পবিত্রতা আছে বা নির্দেশনা আছে সেটি রক্ষা করার চেষ্টা করব।

এ ছাড়া এই মাসের মধ্যে অতিরিক্ত আর একটি বিষয় করণীয় হচ্ছে, আশুরার রোজা রাখা। সম্ভব হলে আল্লাহর বান্দাগণ আশুরার ১০ তারিখে অর্থাৎ মহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখবেন। ১০ তারিখের এই রোজাটি ৯, ১০ বা ৯, ১০, ১১ বা ১০, ১১ বা শুধু ১০ তারিখেও পালন করতে পারেন।

আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস

আশুরার রোজা সম্পর্কে বিভিন্ন জায়গায় হাদিস বর্ণনা রয়েছে। তাই যারা এই দিনগুলোতে রোযা রাখতে চান তারা অবশ্যই নিচে থেকে আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস জেনে নিবেন।

আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে— আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১/২৪১)

মহররমের রোজার মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি : ১/২১৮)

এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১৫৭)

আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১/১৫৭)

অন্য হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি : ১/১৫৮)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৫৯)

মুহাররম মাসের ইতিহাস

যারা মুহাররম মাসের ইতিহাস জানেন না। তাদের জন্য এখানে মহররম মাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে। নিজে থেকে দেখে নিন মুহাররম মাসের ইতিহাস সমূহ।

১লা মুহাররম

রাসূল (সা.) এর নবুওয়াত লাভের সপ্তম বছরে মক্কায় কুরাইশ বংশীয় বনী হাশিম (রাসূলের নিজের গোত্র) ছাড়া অন্যসকল গোত্র রাসূল (সা.) কে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বনী হাশিমকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। নবুওয়াতের সপ্তম বছরের ১লা মুহাররম থেকে এই বয়কট কার্যকর শুরু হয়।

মক্কাবাসীদের সর্বাত্মক বয়কটের কারণে বনী হাশিমের প্রধান, রাসূল (সা.) এর চাচা আবু তালিব তার গোত্রের লোকদের নিয়ে তৎকালীন মক্কার বাইরে এক উপত্যকায় অবস্থান নেন। হিজরতের ছয় বছর আগে বনী হাশেমকে মক্কার মানুষের এই বয়কটের ঘটনা ইতিহাসে শিয়াবে আবু তালেব তথা আবু তালিবের পরিবারের বন্দীত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বনী হাশিমের আশ্রয় নেওয়া স্থানটিও শিয়াবে আবু তালিবের উপত্যকা হিসেবে বর্তমানে পরিচিত। তিন বছরের সর্বাত্মক বয়কটের পর নবুওয়াতের দশম বছরে অর্থাৎ হিজরতের তিন বছর আগে কুরাইশদের কিছু লোকের উদ্যোগে এই বয়কটের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা করা হয় এবং বনী হাশিমকে মক্কার বাইরে থেকে ফেরৎ আনা হয়।

৭ হিজরী সালে রাসূল (সা.) এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী যাতুর রিকায় সমবেত হওয়া নজদের গাতফান গোত্রের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

৮১ হিজরীর ১লা মুহাররম হযরত আলী (রা.) এর পূত্র এবং হযরত হাসান ও হুসাইন (রা.) এর সৎভাই মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আবু তালিব (মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া নামে বেশি পরিচিত) ইন্তেকাল করেন।

৫৬৭ হিজরীর ১লা মুহাররম তথা ১১৭১ ঈসায়ীর ১০ই সেপ্টেম্বর মিশরে সালাহউদ্দীন আল-আইয়ুবী জুময়ার খুতবায় তৎকালীন কায়রোর ফাতেমী খলীফার নাম বাতিল করে বাগদাদের আব্বাসী খলীফার নামে খুতবা পাঠের নির্দেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে মিশরে ফাতেমী খেলাফতের সমাপ্তি ঘটে।

২রা মুহাররম

৬১ হিজরীর ২রা মুহাররম হযরত হুসাইন (রা.) তার পরিবার-পরিজন ও সহচরদের নিয়ে মক্কা থেকে কারবালার প্রান্তরে এসে পৌঁছান। এখানে তারা উমাইয়া সেনাদের কাছ থেকে কুফায় যেতে বা মক্কায় ফেরৎ যেতে বাধা পান।

৪ঠা মুহাররম

৫৬৭ হিজরীর ৪ঠা মুহাররম মোতাবেক ১১৭১ ঈসায়ীর ১৩ই সেপ্টেম্বর শেষ ফাতেমী খলীফা আল-আদীদ ইন্তেকাল করেন।

৫ই মুহাররম

৬৫৯ হিজরীর ৫ই মুহাররম মোতাবেক ১২৬০ ঈসায়ীর ১০ই ডিসেম্বর মামলুক বাহিনী মোঙ্গলদের সিরিয়ায় হিমসের ১ম যুদ্ধে পরাজিত করে সিরিয়া থেকে মোঙ্গল বাহিনীকে তাড়িয়ে দেয়।

৭ই মুহাররম

৬১ হিজরীর ৭ই মুহাররম বর্তমান ইরাকের কারবালার প্রান্তরে উমাইয়া সেনাবাহিনী ইমাম হুসাইন (রা.) এর কাফেলাকে সকল দিক থেকে অবরুদ্ধ করে এবং তাদের জন্য পানি সরবরাহও বন্ধ করে দেয়।

১০ই মুহাররম

মহাপ্লাবন শেষে নূহ (আ.) এর নৌকা ১০ই মুহাররম তারিখে তুরস্ক-ইরান সীমান্তের জুদি পাহাড়ে ঠেকে এবং নূহ (আ.) ও তার অনুসারীরা নৌকা থেকে পৃথিবীর বুকে নেমে আসেন।

১০ই মুহাররম তারিখে হযরত মুসা (আ.) এর নেতৃত্বে বনী ইসরাইল লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে ফেরাউনের অধীনতা থেকে মুক্ত হয় এবং ফেরাউন ও তার বাহিনী বনী ইসরাইলকে ধাওয়া করতে গিয়ে লোহিত সাগরে ডুবে নিহত হয়।

৬১ হিজরীর ১০ই মুহাররম তথা ৬৮০ ঈসায়ীর ১০ই অক্টোবর তারিখে কারবালায় ইমাম হুসাইন (রা.) তার স্বল্প সংখ্যক সহচরদের নিয়ে উমাইয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। ইমাম হুসাইন (রা.) তার ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে পাঁচ হাজার উমাইয় সেনার সাথে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেন। উমাইয়া বাহিনী হযরত হুসাইন (রা.) সহ কারবালার সকল শহীদদের মাথা কেটে নেয় এবং নারীদের সহ তার জীবিত পরিজনদের বন্দী করে।

১২ই মুহাররম

৬১ হিজরীর ১২ই মুহাররম উমাইয়া বাহিনীর কারবালা ছেড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় বনী আসাদ গোত্র শহীদের মাথা কাটা লাশ কারবালার ময়দানেই দাফন করে।

১৪ই মুহাররম

১২৬১ হিজরীর ১৪ই মুহাররম তথা ১৮৪৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী আমীর আবদুল কাদির আল-জাযায়েরী ফরাসী সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হন।

২১শে মুহাররম

৮৯৭ হিজরীর ২১শে মুহাররম মোতাবেক ১৪৯১ সালের ২৫শে নভেম্বর ইউরোপের আইবেরিয় উপদ্বীপে মুসলমানদের শেষ অবস্থান গ্রানাডাকে খ্রিস্টান আরাগন-ক্যাস্টিলীয় সাম্রাজ্যের কাছে হস্তান্তরের চুক্তিতে সাক্ষর করেন গ্রানাডার শেষ সুলতান দ্বাদশ মুহাম্মদ।

২৫শে মুহাররম

৯৫ হিজরীর ২৫শে মুহাররম মোতাবেক ৭১৩ ঈসায়ীর ২০শে অক্টোবর কারবালার যুদ্ধে হযরত হুসাইন (রা.) এর বেঁচে যাওয়া একমাত্র পূত্র ইমাম জাইনুল আবেদীন আলী বিন হুসাইন ইন্তেকাল করেন।

২৬শে মুহাররম

৬৪ হিজরীর ২৬শে মুহাররম মোতাবেক ৬৮৩ ঈসায়ীর ২৪শে সেপ্টেম্বর উমাইয়া বাহিনী প্রথমবারের মতো হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.) এর অধীন মক্কা শহর দখলের জন্য অবরোধ শুরু করে। উমাইয়াদের আক্রমণে পবিত্র কাবাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু একই বছরের রবীউল আউয়াল তথা নভেম্বরে উমাইয়া খলীফা ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইন্তেকাল করলে উমাইয়া বাহিনী অবরোধ প্রত্যাহার করে ফিরে যায়।

২৭শে মুহাররম

মিশরে ফরাসী আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২১৫ হিজরীর ২৭শে মুহাররম তথা ১৮০০ ঈসায়ীর ২০শে জুন কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী বছর ১২১৬ হিজরীর ১৯শে সফর তথা ১৮০১ ঈসায়ীর ২রা জুলাই পুনরায় আল-আজহারে পাঠদান শুরু হয়।

২৮শে মুহাররম

৬৭৬ হিজরীর ২৮শে মুহাররম মোতাবেক ১২৭৭ ঈসায়ীর ১লা জুলাই মিশরের দ্বিতীয় মামলুক সুলতান ও আইন জালুত যুদ্ধের দুর্ধর্ষ সেনাপতি রুকন উদ্দীন বাইবার্স ইন্তেকাল করেন।

৩০শে মুহাররম

৭ম হিজরীর ৩০শে মুহাররম তারিখে রাসূল (সা.) এর নেতৃত্বে খাইবারে ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। প্রায় এক মাসের অভিযান শেষে রাসূল (সা.) খাইবারের সকল দূর্গ জয় করে নেন এবং ইহুদিদের কর দেওয়ার শর্তে খাইবারে থাকার অনুমতি দেন।

আশুরার রোজা কয়টি?

যারা মহরম মাসে আশুরার রোজা রাখবেন। তারা অনেক সময় বুঝতে পারেননা কতটি রোজা রাখতে হবে। এই পোস্টে আশুরার রোযার সাহায্যে সবাইকে বোঝানো হয়েছে তাৎপর্য সমূহ।

হাদিসের ঘোষণায় আশুরার রোজা যেহেতু ফজিলতপূর্ণ। তাহলে আশুরায় কয়টি রোজা রাখবেন? ‘হ্যাঁ’, আশুরার রোজা মূলত ১০ মুহররমের রোজা। তবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে আশুরার রোজার সঙ্গে একটি রোজা বাড়িয়ে রাখার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসের বর্ণনায় বিষয়টিও সুস্পষ্ট হয়ে যায়-
صُومُوا عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا وَبَعْدَهُ يَوْمًا
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,ম ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ। আর তাতে ইয়াহুদিদের বিরোধিতা কর। আশুরার একদিন আগে কিংবা পরে একদিন রোজা রাখ।’ (ইবনে খুজায়মা)

সর্বশেষ কথা

আমরা চেষ্টা করেছি সবাইকে মহররম ও আশুরার ফজিলত সম্পর্কে জানানোর জন্য। আশা করি আমাদের পোষ্ট থেকে মহররম ও আশুরার ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আজকের এই পোস্ট যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন। এবং মহররম ও আশুরার ফজিলত নিয়ে কোন কথা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আরও দেখুনঃ

রমজানের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস, উক্তি, এসএমএস ও পিকচার

ইসলামিক ফেসবুক স্ট্যাটাস

রমজানের সময়সূচি । Ramadan Calendar

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top